দিনাজপুরে ভুট্টা, গম ও আলুর আবাদ বাড়লেও কমেছে ধানের
দিনাজপুরে ভুট্টা, আলু ও গমের আবাদ বাড়ছে। খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা দিনাজপুর বরাবর ধান উত্পাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা ধান আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন।
জানা যায়, প্রতিবার ধানের বাম্পার ফলনের মাধ্যমে দেশের খাদ্যভাণ্ডারে দিনাজপুর জোগান দেয় ছয়-আট লাখ টন ইরি-বোরো চাল। এছাড়া আমন ধানের ফলনেও যুক্ত হয় আরো তিন-চার লাখ টন চাল। দেশের খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক জেলা দিনাজপুরে আশঙ্কাজনক হারে ধানের আবাদ কমে আসছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তথ্যে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের বদলে ভুট্টা, আলু ও গমের আবাদ হয়েছে। ফলে চলতি বছর প্রায় ৩২ হাজার টন বোরো চাল কম উত্পাদন হয়েছে। ধান ছাড়াও অন্যান্য শস্য উত্পাদনে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে এখন ভুট্টা, আলু ও গম চাষে উত্সাহ দেখাচ্ছেন।
কৃষি কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানান, কৃষক উত্পাদন খরচের তুলনায় ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই বিড়ম্বনা ও মানসিক অস্থিরতা দূর করার জন্য ধানের আবাদ কমিয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা, গম ও আলুর আবাদ বাড়ছে। ন্যায্যমূল্য ছাড়াও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও কৃষি উপকরণের চড়া দাম কৃষকদের এখন ধান চাষে নিরুত্সাহিত করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলার ১ লাখ ৭৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার ১৮০ হেক্টর উফশী ও ১৩ হাজার ৯২০ হেক্টর হাইব্রিড জাতের বোরো ধান। ফলে উত্পাদিত বোরো চালের পরিমাণ পাওয়া যায় ৬ লাখ ৮৬ হাজার ১০৬ টন; এর মধ্যে ৬ লাখ ২০ হাজার ৫৪৩ টন উফশী ও ৬৫ হাজার ৫৬৩ টন চাল হাইব্রিড জাতের।
২০১২ সালের বোরো মৌসুমে আবাদ করা হয় ১ লাখ ৮০ হাজার ২২৫ হেক্টর জমি। এতে চাল উত্পাদন হয় ৭ লাখ ১৭ হাজার ৬৫৬ টন। কিন্তু গতবারের তুলনায় এবার সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে ধান কম আবাদ হওয়ায় বোরো চালের উত্পাদন কমেছে ৩২ হাজার টন। উত্পাদনের এ ঘাটতি দেশের খাদ্যশস্য মজুদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে অনেকের ধারণা।
ধানের জেলা দিনাজপুরে ক্রমে ধান উত্পাদনের এলাকা কমে আসায় খাদ্যশস্য ঘাটতি পূরণে বাইরের দেশের চালের ওপর নির্ভরশীল হলে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হবে। তাই কৃষকদের ধান চাষে ফিরিয়ে আনতে প্রণোদনামূলক প্যাকেজসহ ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। উত্পাদন ব্যয়ের তুলনায় ধান-চাল বিক্রির দাম যদি কম হয়, তাহলে কৃষক স্বাভাবিকভাবে ধান চাষে আগ্রহ ধরে রাখতে পারবেন না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, গতবারের তুলনায় এ বছর প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা, আলু ও গমের আবাদ বেড়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮০০ হেক্টরে ভুট্টা, ৩ হাজার ৫০০ হেক্টরে আলু এবং ৪ হাজার ৭০০ হেক্টরের বেশি জমিতে গম আবাদ হয়েছে। ফলে ২০১২ সালে যেখানে ৪৪ হাজার ৫০ হেক্টরে ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৬০ টন ভুট্টা উত্পাদন হয়েছিল, সেখানে এ বছর ৫১ হাজার ১৫০ হেক্টরে ভুট্টার ফলন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার টন। গত বছর ৩৪ হাজার ৫০০ হেক্টরে আলুর ফলন হয় ৬ লাখ ৫৬ হাজার আর এ বছর ৩৭ হাজার ৬২০ হেক্টরে ফলন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার টন।
২০১২ সালে ১৬ হাজার ৭২ হেক্টরে গম উত্পাদন হয় ৫১ হাজার ৬০০ টন আর চলতি বছরে তা বেড়ে ২০ হাজার ৪২৫ হেক্টরে গমের ফলন হয়েছে প্রায় ৬৬ হাজার টন। এতে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন।
কৃষির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা, ধানের দাম কৃষকরা যেন লাভজনকভাবে পান, সে ব্যবস্থা না করলে স্বাভাবিকভাবেই ধান উত্পাদনে কৃষকের আগ্রহ কমে যাবে।
সূত্রঃ বণিক বার্তা ১৩/০৬/২০১৩