
ডাহুকের ডাক শুনতে কি পাও?
মিজান নয়ন, চরফ্যাশন (ভোলা)
কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে ডাহুক। গ্রাম বাংলার খাল বিলের জলাশয়গুলোয় ডাহুকের ডাক এখন আর আগের মতো শোনা যায় না । যদিও বা কোথাও শোনা যায় তবে তাকে একটি বিরল ঘটনা বলেই ধরে নিতে হবে।
ডাহুক পাখি নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই । কাব্যে আছে, ডাহুকের ডাক প্রেমিকের মনে বিরহের সৃষ্টি করে। তখন প্রেমিক মন একাকী চলে যেতে চায় কোন নির্জন ছায়াঘেরা পথে। নির্জনতার মাঝে সে আশ্রয় খুঁজে ফেরে। বাংলা সাহিত্যে ডাহুক একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কবি ফররুখ আহমেদের আধ্যাত্মিক চেতনা সমৃদ্ধ ‘ডাহুক’ কবিতাটি ডাহুককে অনেক উচ্চ স্থানে নিয়ে গেছে । জলের পাখি ডাহুক অত্যন্ত ভীরু ও লাজুক স্বভাবের । মানুষের সাড়া পেলেই সে লুকিয়ে পড়ে। জলাভূমির আশপাশে বসবাসকারী এই পাখিটি দেখতে মাঝারি আকৃতির। লেজ ছোট। পা লম্বা। পায়ের আঙ্গুলও বেশ লম্বা। পিঠের রং ধুসর থেকে খয়েরী কালো। মাথা ও বুকের অংশে থাকে লালচে আভা। ঠোঁটের রং হলুদ। তবে ঠোঁটের উপর লাল রংয়ের একটি ছোট্ট দাগ রয়েছে। ডাহুক অনেক সময় পোষও মানে । পোষা ডাহুক দিয়ে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে অনেকে বুনো ডাহুক শিকার করে। গ্রামে গেলে বর্ষার রাতে ভাগ্য ভালো থাকলে ডাহুকের ডাক শুনতে পাবেন। নির্জনতার মাঝে ডাহুকের বিশেষ ধরনের সেই ডাক শুনলে মন অন্য এক জগতে যেন হারিয়ে যায়। পাখিটি একটানা অনেকক্ষণ ডেকে শ্বাস নেয় । বিশেষজ্ঞদের মতে, ডাহুকসহ বাংলাদেশের সব পাখিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্য তৈরি করতে হবে এবং এজন্য ব্যাপক হারে সামাজিক বনায়নের প্রতি জোর দেয়া প্রয়োজন। তাদের অনেকেই মনে করেন, সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে দেশের প্রতিটি স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের কাজে লাগানো গেলে গাছের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং নানা জাতের পাখি সেসব গাছে আশ্রয় নিতে পারবে। তাদের বংশ বৃদ্ধি পাবে এবং সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষিত হবে।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক (২১/০৭/২০১৩)