আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় একটি দিঘীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সুবিশাল বনভূমি। শালবন এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ ২৬৪ হেক্টর জমির এই বনভূমির ঠিক মাঝখানেই রয়েছে প্রায় ৪৩ একর আয়তনের একটি বিশাল দিঘী, যা ‘আলতাদিঘী’ নামে পরিচিত। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে একে ‘আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি এই উদ্যানটির উন্নয়নে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। যথাযথ সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হলে উদ্যানটি জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
কথিত আছে, আনুমানিক ১৪০০ সালে এ অঞ্চলে রাজা বিশ্বনাথ জগদল রাজত্ব করতেন। আবহমান কাল থেকেই রুক্ষ এই বরেন্দ অঞ্চলে পানির অভাব ছিল এবং রাজা বিশ্বনাথের রাজত্বকালে এই পানির অভাব প্রকট হয়। মাঠ ঘাট শুকিয়ে চৌচির হওয়ায় আবাদি জমিতে ফসল ফলানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে। হঠাত্ একদিন রাণী স্বপ্নে দেখলেন, পানি সমস্যা সমাধানে এলাকায় একটি দিঘী খনন করতে হবে। সে অনুযায়ী রাণী রাজাকে বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না পা ফেটে রক্ত বের হবে ততক্ষণ তিনি হাঁটতে থাকবেন এবং যেখানে গিয়ে পা ফেটে রক্ত বের হবে ততদূর পর্যন্ত একটি দিঘী খনন করে দিতে হবে। পাইক পেয়াদা, লোক লস্করসহ রাণী হাঁটা শুরু করলেন। অনেক দূর হাঁটার পর রাণী যখন থামছিলেন না, তখন পাইক-পেয়াদারা ভাবলেন এত বড় দিঘী খনন করা রাজার পক্ষে সম্ভব হবে না, সে কারণে তাদের একজন রাণীর পায়ে আলতা ঢেলে দিয়ে চিত্কার করে বললেন, রাণী মা আপনার পা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। একথা শুনে রাণী সেখানেই বসে পড়লেন। রাজা বিশ্বনাথ ওই স্থান পর্যন্ত একটি দিঘী খনন করে দিলেন। এরপর অলৌকিকভাবে মুহূর্তেই বিশুদ্ধ পানিতে ভরে ওঠে দিঘী। রাণীর পায়ে আলতা ঢেলে দেয়ার প্রেক্ষিতে দিঘীটির নামকরণ করা হয় আলতাদিঘী। দিঘীটির দৈর্ঘ্য ১.২০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ০.২০ কিলোমিটার।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, পরিবেশের উন্নয়ন এবং পর্যটকদের আকর্ষিত করার লক্ষ্যে শিগগিরই আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানের উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে। ‘স্ট্রেদেনিং রিজিওনাল কোঅপারেশন ফর ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন’ প্রকল্পের অধীনে বিশ্বব্যাংক এ জন্য আর্থিক সহায়তা দেবে।
রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র জানান, এ ব্যাপারে তিন কোটি ৫১ লাখ ৭৬ হাজার টাকার একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে একটি পশু চিকিত্সা কেন্দ নির্মাণ করা হবে। বন্য প্রাণী ও উদ্যান তদারকির জন্য নির্মিত হবে চারটি অবজারভেশন টাওয়ার। পর্যটকদের সুবিধার্থে ১০টি সাইনবোর্ড, একটি গাইড ম্যাপ, চারটি ছাতা শেড, ১০টি কাঠের তৈরি বসার বেঞ্চ, একটি পার্কিং এলাকা এবং ১০টি আরসিসি বসার বেঞ্চ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া উদ্যানের পরিধি বাড়াতে পাঁচ হাজার দুর্লভ প্রজাতির চারা রোপণ করা হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান একটি আদর্শ বিনোদন কেন্দে পরিণত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এদিকে আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানের উন্নয়ন কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক(০৮/০৫/২০১৩)
আব্দুল্লাহ হেল বাকী