আগ্রহ বাড়ছে মহিষ পালনে
সাইফুল হাসান
দেশে দুধ ও মাংসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলায় সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হতে পারে মহিষ পালন। নদী-নালা, খাল-বিলসহ উপকূলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এ গবাদিপশুটি পালনের উপযোগী। এর রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বেশি। মহিষের খাদ্য খরচ তুলনামূলক কম। অথচ দুধ ও মাংস পাওয়া যায় বেশি। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কয়েক বছর ধরে সরকারও মহিষ পালন বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে মহিষ ছিল ১১ লাখ ৬০ হাজার। ২০১০-১১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ লাখে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বড় কোনো উন্নয়ন কর্মসূচি ছাড়াই যুগ যুগ ধরে চলছে মহিষ পালন। সাধারণত প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপরই নির্ভরশীল এসব মহিষ বাথান।
এ বিষয়ে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত বণিক বার্তাকে বলেন, মহিষ পালনে সরকার বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। উপকূলীয় ও চরাঞ্চলগুলোয় মহিষের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভোলার লালমোহনে একটি কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে; যেখানে ইতালির মোরা জাতের সঙ্গে স্থানীয় জাতের ক্রস ব্রিডিং করা হবে। এর মাধ্যমেই মহিষের মানোন্নয়ন শুরু।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় মহিষ থেকে দুধ পাওয়া যায় দিনে দেড় থেকে তিন লিটার। আর মাংস হয় ১৫০ থেকে ২৫০ কেজি। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে প্রতি মহিষ থেকে সর্বোচ্চ ৮ লিটার দুধ এবং ৫০০ কেজি মাংস পাওয়া যাবে। বাগেরহাটে এরই মধ্যে মহিষের একটি খামার গড়ে তোলা হয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল লালমোহনে একটি মহিষ মেলারও আয়োজন করা হয়। প্রণোদনা দিতে ২০২১ সাল পর্যন্ত পোলট্রি ও ডেইরি খাতকে শুল্কমুক্ত রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সরকারের পাশাপাশি বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও মহিষ পালন ও এর মানোন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করছেন। চীনের বিজিআই নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেসরকারি খাতে লাল তীর লাইভস্টক মহিষের মানোন্নয়নে একটি প্রকল্প নিয়েছে। চীনা কোম্পানিটি লাল তীরকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে।
এদিকে দুধ ও মাংস— এ দুটি খাদ্য উত্পাদনে চাহিদার তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বছরে ৩০ হাজার টন গুঁড়ো দুধ আমদানি করে চাহিদা সামাল দেয়া হয়। আর ভারত থেকে আসা গরু-মহিষ মেটায় মাংসের আংশিক চাহিদা।
বেঙ্গল মিটের উদ্যোক্তা কুতুবউদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, গরুর বিকল্প উত্স খুঁজে বের করতেই হবে, সেটাই হবে যৌক্তিক। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মহিষের মাংস রফতানিরও পরিকল্পনা বেঙ্গল মিটের রয়েছে। এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, নিয়মিত ভালো জাতের মহিষ পাওয়া যায় না। এর খামার গড়ে তুলতে পারলে তা অর্থনৈতিক দিক দিয়েও লাভজনক হবে।
খাদ্য ও পশুসম্পদ খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মহিষ চাষে গরুর তুলনায় সাফল্য পাওয়া যাবে বেশি। এজন্য দরকার প্রযুক্তি, বড় বিনিয়োগ ও সরকারি নীতিসহায়তা।
সূত্রঃ বণিক বার্তা ৪/৫/২০১৩