শেষ হল জাবির উৎসবমুখর প্রজাপতি মেলা : রং-বেরঙের প্রজাপতি রং ছড়াল আকাশে

butterfly
ছবি : লিসান আসিব খান

প্রকৃতি ও জীবনের বর্ণিল অনুষঙ্গ হচ্ছে প্রজাপতি। প্রজাপতি শুধু নিজেই সুন্দর নয়, সে মানুষের মনকে উদ্বেলিত করে, প্রেরণা জোগায় । ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’—এ প্রতিপাদ্যে শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে হয়ে গেল প্রজাপতি মেলা ২০১৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখার উদ্যোগে ষষ্ঠ বারের মত দক্ষিণ এশিয়ার সবচে বড় এই প্রজাপতি উৎসব শুরু হয় সকাল ৯ টায়। প্রজাপতি বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

ছবি : লিসান আসিব খান
ছবি : লিসান আসিব খান

বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে এ মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন (উপ-উপাচার্য)। পরে তিনি প্রজাপতির বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এরপর ‘ডঃ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান কারখানা’র পাশে নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সিণ্ডিকেট কর্তৃক বরাদ্দকৃত ৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা বাংলাদেশের অন্যতম ‘প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন তিনি ।

গবেষক অধ্যাপক ড. মোঃ. মনোয়ার হোসেন বলেন , বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির সংরক্ষণে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে প্রজাপতির এই ‘কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র’। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপায়ে বংশবৃদ্ধি এবং পূর্ণতা প্রাপ্তির পর নতুন প্রজাপতির প্রজনন করা হবে। এখানে কৃত্রিম উপায়ে প্রজাপতির খাবার ও অন্যান্য অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এর মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় অনেক প্রজাতি সংরক্ষণ করা সহজ হবে। এছাড়াও প্রজাপতির সংরক্ষণ, প্রজনন ও গবেষণাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে ‘বাটারফ্লাই ব্রিডিং সেন্টার অ্যান্ড পার্ক’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন। এতে থাকছে প্রজাপতির ব্রিডিং নেট হাউজ, প্রজাপতির মিউজিয়াম ও রিসার্চ সেন্টার। আরও থাকছে চিত্তবিনোদনের জন্য পার্ক।

এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের , আইইউসিএনের (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ,ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজির ডিন এস এম মাহবুবুল হক মজুমদার প্রমুখ।

ছবি : লিসান আসিব খান
ছবি : লিসান আসিব খান

আয়োজকরা জানিয়েছেন, শিশু কিশোরদের মধ্যে প্রকৃতি প্রেম তৈরি করতেই এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির ভূমিকা তুলে ধরতেই এ আয়োজন।
“ ছোটবেলায় প্রজাপতির সাথে আমরা কম বেশি খেলা করেছি আর এখন এই ঢাকা শহরে প্রজাপতির দেখা পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই দুর্লভ । রাজধানীতে দৃষ্টিনন্দন শোভা দেখার সুযোগ তেমন নেই ।আমি এর আগে কখনও এত প্রজাপতি দেখিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রংয়ের প্রজাপতি দেখে অনেক ভালো লাগছে।” – বলেন প্রজাপতিপ্রেমী সুমন হক।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সার্বিক অবদানের জন্য আইইউসিএনকে (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার) বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল আল হায়দারকে ইয়াং বাটারফ্লাই এনথুজিয়াস্ট পুরস্কার দেওয়া হয়।

বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি প্রদর্শন ছাড়াও দিনব্যাপী এ মেলায় আরো ছিল প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণাকেন্দ্রের উদ্বোধন, প্রজাপতিবিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা (শিশু-কিশোরদের জন্য), প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি প্রদর্শন, অরিগামি প্রজাপতি, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতিবিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics