স্বচ্ছ শামুক

নাসরিন সুলতানা

সাগর সৈকতে গেলে দেখা মেলে সুন্দর সুন্দর শামুকের। সৈকতের বালুর ওপর ওদের খোলগুলো পড়ে থাকে। শামুকের শরীর খুবই নরম। আর যেগুলো প্রাপ্তবয়স্ক, সেগুলোর শরীর প্যাঁচানো খোলে ঢাকা থাকে। শামুক কোথায় নেই? জলে স্থলে সবখানে তার বিচরণ। আবার সামুদ্রিক শামুক যেমন আছে, তেমনি আছে মিঠাপানির শামুকও। নদী বা প্রবাহমান জলাধার, বদ্ধ জলাশয়, হ্রদ, পুকুর, সমুদ্র ঊপকূল- সবখানেই শামুকের আনাগোনা। এমনকি মরুভূমিতেও শামুকের দেখা মেলে। তবে স্থলে যেসব শামুক দেখা যায়, সেগুলো খুব কম প্রজাতির আর সংখ্যায়ও কম। সাগরের শামুকেরই বৈচিত্র বেশি। শামুক মূলত তৃণভোজী। কিছু সামুদ্রিক শামুক মাংসভোজী। আবার কিছু মাংসভোজী ও তৃণভোজী। তৃণভোজী শামুক গাছের পাতা, গাছের নরম বাকল, ফল, শাক ইত্যাদি খায়। স্থলচর শামুকের সবই তৃণভোজী। জলজ শামুকের খাবার-দাবারের মধ্যে আছে প্লাংকটন, অ্যালজি, গাছ-গাছড়া ও খুদে খুদে জলজ প্রাণী। এই শামুকদের নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে বিস্তর। দুনিয়ায় আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন প্রজাতির শামুক। শামুকেরা বাঁচেও অনেকদিন। হেলিক্স প্রজাতির শামুক বাঁচে দুই থেকে তিন বছর। তবে পালন করা শামুক বাঁচে বেশিদিন। দশ থেকে পনের বছরের কম নয়। কিছু শামুক তিরিশ বছর পর্যন্ত বাঁচার রেকর্ড করেছে। শামুকের সঙ্গে পরিচয় নেই, এমন মানুষ খুব বেশি নেই। কমবেশি অনেকেই শামুক দেখে থাকবেন। বিশেষ করে শামুকের খোল। ভিতরের নরম পিচ্ছিল প্রাণীটি মরে গেলে, শামুকের বাইরের খোলসটি রয়ে যায়। অনেকে সেই খোলস নিয়ে আসেন। সাজিয়ে রাখেন বাড়িতে। এই খোলস দিয়ে আবার কেউ শিল্পকর্মও তৈরি করেন। শামুকের নরম শরীরটিকে রক্ষা করার জন্যই এই খোলস।
শামুকের খোলস বেশ সুন্দর। নানান রঙের, নানান নকশার। কত যে রঙের বাহার দেখা যায় শামুকের খোলসে! সাদা খোলসের শামুকও আছে। আর আছে স্বচ্ছ খোলসের শামুক। ওই স্বচ্ছ খোলসের ভেতর দিয়ে শামুকের নরম শরীর দেখা যায়। মনে হয় যেন শো কেসে সাজিয়ে রাখা কোনো প্রাণী ভেতরে।
SubtBiol-011-045-g002দুনিয়ার সবচাইতে গভীর গুহাগুলোর একটি হচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার লুকিনা জামা-ট্রোজামা। এই গুহার অসংখ্য শাখাপ্রশাখার মাঝে সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না। ১ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং খাড়াভাবে নিচের দিকে নেমে যাওয়া পাথরের গুহা এটি। এমন পরিবেশের মধ্যে পাওয়া গেছে এই স্বচ্ছ শামুকের প্রজাতিটি। Zospeum tholussum নামের এই শামুক অন্ধকারে থাকতে থাকতে হারিয়ে ফেলেছে এর দৃষ্টিশক্তি এবং একে গুহার বাইরে বসবাস করতে দেখা যায় না। এর পুরো শরীরটাই স্বচ্ছ। নরম ও পিচ্ছিল অংশটি এবং ওপরের প্যাঁচানো গম্বুজাকৃতির খোলসটিও স্বচ্ছ। দেখলে মনে হতে পারে কাঁচ বা স্বচ্ছ প্লাস্টিক পেঁচিয়ে বুঝি তৈরি করা হয়েছে শামুকটিকে। Subterranean Biology জার্নালে প্রকাশিত হয় এই প্রজাতি আবিষ্কারের তথ্য এবং এর বিবরণ। গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং ক্রোয়েশিয়ার বায়োসেপেলিওলজিকাল সোসাইটির গবেষকরা ওই গুহায় গবেষণা চলাকালীন এই প্রজাতির মাত্র একটিই নমুনা খুঁজে পান। ছোট্ট এবং হাল্কা গড়নের এই শামুকটিকে খুঁজে পাওয়া গেছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯৮০ মিটার নিচে, পাথর ও বালিপূর্ণ একটি কক্ষে যার মধ্য দিয়ে বইছে একটি শীর্ণ খাড়ি। এই ধরনের শামুক নিজে থেকে খুব একটা নড়াচড়া করে না এবং সাধারণত পানির উৎসের কাছে এদেরকে দেখা যায়। এছাড়া বড় আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে আটকে থেকেও এরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারে।

সূত্রঃ  http://www.jugantor.com/oneday-everyday/2013/10/27/37391#sthash.5R29x4yr.dpuf

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading