পাখির রাজা ফিঙে

আলম শাইন
fingeপক্ষীকুলের সমাজপতিরা একবার ‘পাখিরাজ’ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচন পদ্ধতি হচ্ছে যে পাখি যত ওপরে উঠতে পারবে সে হবে তাদের রাজা। ঘোষণা অনুযায়ী পাখিরা একদিন আকাশে ডানা মেলল। মূলত চিল, বাজ, শকুন নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ছোট পাখিদের মধ্যে ফিঙের সাধ জেগেছে আকাশে ওড়ার, সমস্যা হচ্ছে সে এত ওপরে উঠতে পারছে না। বিষয়টা মাথায় ঢুকতেই ওর মনে কূটবুদ্ধি এলো। ফিঙেটা চুপিচুপি চিলের পিঠে সওয়ার হলো। টের পায়নি তা চিল। চিল অন্য সব পাখিকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে ওপরে উঠেছে এক সময়। আশপাশে তাকিয়েছিল যখন নিশ্চিত হয়েছে আর কেউ অত ওপরে উঠতে পারেনি, তখন সে নিচে নামতে শুরু করল। আর সেই সুযোগেই ফিঙে চিলের পিঠ ছেড়ে আরেকধাপ ওপরে উঠে গেল। কর্তৃপক্ষ দেখেছে ফিঙের অবস্থানই সবার ওপরে। সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা এসেছে ‘আজ থেকে পাখিদের রাজা ফিঙে’।
হ্যাঁ, ফিঙে খুবই সাহসী পাখি। চিল, বাজ, শকুনকেও ছেড়ে কথা বলে না। ওদের নাগালের মধ্যে এলেই ঠুকরিয়ে দেয়। বাসার কাছে গেলে মানুষকে পর্যন্ত আক্রমণ করে। ছোট পাখিরা ওদের অবস্থানের কাছাকাছি বাসা বেঁধে নিরাপদে থাকে তাই। ফিঙে নিয়ে একটি স্মৃতি মনে পড়ে সব সময়। আমার ছোটবেলার বন্ধু এমরান হোসাইন  (রাজধানীর মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক) ভালো বাঁশের বাঁশি বাজাতে পারে। ওর কাছে বাঁশি বাজানো শিখতে চাইলে আমাকে নিয়ে গ্রামের এক নির্জনে গাছের নিচে বসল। তারপর বাঁশিতে ফুঁ দেয়ার কৌশল শিখাতে লাগল। দু-চারটা ফুঁ দিয়েছে মাত্র, ঠিক অমনি ওর মাথায় একদলা পাখির বিষ্ঠা ওপর থেকে পড়ল। হতচকিত হয়ে আমরা ওপরে তাকাতেই দেখতে পেলাম একজোড়া ফিঙে বসে আছে মাথার ওপরের গাছের ডালে। মনের দুঃখে ওইদিন প্রশিক্ষণ বন্ধ করে  দেয় সে। দীর্ঘদিন পর বন্ধু সেই স্মৃতিটা মনে করিয়ে দিয়েছে আমাকে এবং ফিঙে নিয়ে কিছু লিখতেও বলেছে। আরেক অপরিচিত পাঠক, অধ্যাপক অরবিন্দ পাল অখিল। তিনি নান্দাইল (ময়মনসিংহ) উপজেলার সমূর্ত্ত জাহান মহিলা কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। ‘নান্দাইল অ্যামেচার বার্ড ওয়াচার’ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ফিঙের কিছু ছবি পাঠিয়েছেন, লিখতেও অনুরোধ জানিয়েছেন। চেষ্টা করছি তাই ফিঙে নিয়ে কিছু লেখার।
পাখিটার বাংলা নাম : ‘ফিঙে’, ইংরেজি নাম : ‘ব্ল্যাক ড্রোঙ্গো’,  বৈজ্ঞানিক নাম : ‘ডিক্রুরাস মেক্রোসারকাস’।
এ পাখি লম্বায় লেজসহ ২৮-৩১ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত কালো পালকে আবৃত। কালোর ওপরে নীলাভ আভা বের হওয়াতে পালিশ করা চকচকে দেখায়। এদের ঠোঁট ধাতব কালো, গোড়ায় সাদা ফোঁটা থাকে। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পেটের ওপর থাকে সাদা রেখা। যা দূর থেকে আঁশটে দেখায়। পা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
ফিঙের প্রধান খাবার কীটপতঙ্গ, ফুলের মধু টিকটিকি, প্রজাপতি, ভীমরুল, কেঁচো ইত্যাদি।
প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। গাছের তেডালের ফাঁকে বাটি আকৃতির বাসা বানায়। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে পশুর পশম, সরু লতা-ঘাস ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন।
লেখক : আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী গবেষক ও পরিবেশবাদী লেখক।

সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ ২৯/০৬/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics