জোয়ারে বাঁধ ভেঙ্গে আমতলী ও কলাপাড়ার ১৭ গ্রাম প্লাবিত

বরগুনার আমতলী ও পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পূর্ণিমার কারণে জোয়ারে বাঁধ ভেঙে আমতলী ও কলাপাড়ার ১৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও ঝালকাঠি, নলছিটি ও কক্সবাজারের উখিয়ায় মহাসেন-পরবর্তী বৃষ্টির কারণে ধানে ধরেছে পচন ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মঠবাড়িয়ার পৌর শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা, ঝালকাঠি প্রতিনিধি, উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা ও মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতার পাঠানো খবর।

আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার বালিয়াতলী গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গতকাল শনিবার পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারে ভেসে গেছে। ফলে ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে পানি আসায় এলাকার ৬টি গ্রামের ঘরবাড়ি-ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ । image_43660

বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, ঘোপখালী এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বালিয়াতলীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরে চলতি বছর ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি রিংবাঁধ তৈরি করা হয়। পায়রা নদীতে স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে বিপদ সীমার তিন দশমিক ৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হওয়ায় নবনির্মিত রিংবাঁধটি প্রায় ৫শ মিটার জোয়ারের চাপে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, মহাসেনে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পূর্ণিমার প্রভাবে রামনাবাদ নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে গত শুক্রবার থেকে প্লাবিত হচ্ছে ১১টি গ্রাম। এছাড়াও বেড়িবাঁধের বাইরের চারটি গ্রামের শত শত পরিবারের ঘর জোয়ারের পানিতে ডুবছে আর ভাটার পর বাতাসে শুকাচ্ছে। এদিকে জোয়ারের পানিতে কলাপাড়া-কুয়াকাটা সড়কের কলাপাড়া, হাজিপুর ও মহিপুরের তিনটি ফেরির গ্যাংওয়ে ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকায় প্রতিদিন জোয়ারের সময় চার থেকে পাঁচ ঘন্টা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সড়ক যোগাযোগ। এতে স্থানীয় যাত্রী ও কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, মহাসেনের পর থেকে টানা বৃষ্টি, শ্রমিক সংকট, পূর্ণিমায় পানির চাপের কারণে জেলায় ধানে পচন ধরেছে। গজ ধরেও খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কাটা ধান। চলতি বোরো মৌসুমের বিরি জাতের ধান আগে কেটে ঘরে উঠাতে না পারায় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। কীভাবে খরচের টাকা উঠনো যায় তা নিয়ে যখন কৃষকদের ঘুম হারাম তখন স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে—এ কৃষকদেরই নিতে হবে। কারণ কৃষকদের মহাসেনের আগেই ধান কেটে উঠিয়ে ফেলতে বলা হয়েছিল। কৃষকরা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছেন, তখন অর্ধেক ধানই কাঁচা ছিল। চলতি মৌসুমে ঝালকাঠি ও নলছিটিতে প্রায় ৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে বিরি আবাদ করা হয়।

উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকায় কৃষকরা মাঠের পাকা ধান অনেকেই ঘরে তুলতে পারেনি। কিছুসংখ্যক কৃষকের বাড়ির উঠান ভর্তি পাকা ধান বৃষ্টির পানিতে চুপছে গিয়ে নষ্টও হয়ে গেছে। উপজেলার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউছুপ ভুঁইয়া জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ৫ হাজার ৮শ’ একর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ৭৫ শতাংশ ফসল কেটে কৃষকেরা ঘরে তুললেও এসব ধান অনেকের বাড়ির উঠানে মজুদ রয়েছে। বাকি ২৫ শতাংশ মাঠের ধান মাঠে রয়ে গেছে।

মঠবাড়িয়ার পৌর শহরে ২০

হাজার লোক পানিবন্দি

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, পূর্ণিমার কারণে বলেশ্বর ও বিষখালী নদী থেকে আসা জোয়ারের অতিরিক্ত পানি ও গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে ৩/৪ ফুট পানি বেড়ে যাওয়ায় মঠবাড়িয়া পৌর শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দক্ষিণ বন্দর এলাকা ঘুরে গতকাল তাদের বিপাকে থাকার চিত্র দেখা গেছে। ইতিমধ্যে পৌর শহর রক্ষায় জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক (২৬/০৫/২০১৩)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading