স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের স্বার্থেই প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে

দেশের নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাণবৈচিত্র্যের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের বেঁচে থাকার উপকরণ পাই এবং বিভিন্ন ধরণের বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ পদ্ধতির সাথে প্রাণী, উদ্ভিদ ও অণুজীব নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। আর্শিবাদস্বরূপ প্রাণবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ আমরা এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছি যা কোন ভাবেই দেশের প্রাণ ও প্রকৃতির ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি। আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে। যুগোপযোগী প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়ণ করতে হবে। বিশ্ব প্রাণবৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষ্যে আজ ২১ মে ২০১৫, সকাল ১১টায় পবা ও বারসিকের যৌথ আয়োজনে আয়োজিত নাগরিক সংলাপে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।

বক্তারা বলেন, ২০১৫ সালের প্রাণবৈচিত্র দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘প্রাণবৈচিত্র ও উন্নয়ন’ । এর আগেও ২০১০ সালে প্রাণবৈচিত্র্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছিল ‘প্রাণবৈচিত্র্য, উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন’। কিন্তু আমরা যদি ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত হিসাব করি দেখতে পাবো রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘ পাঁচ বছরেও উন্নয়নকে প্রাণের বৈচিত্রময় বিস্তার ও বিকাশের চোখে দেখেনি। বরং মূলধারায় উন্নয়ন কর্মকান্ড অনেকক্ষেত্রেই হয়ে উঠেছে প্রাণবৈচিত্র্য সংহারী। আর প্রাণ মুনাফা আর উদ্বৃত্ত লুন্ঠনের ভেতর দিয়ে সভ্যতাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক মুমূর্ষু ক্রান্তিকালে। প্রাণ ও প্রকৃতির আপন বিবর্তন ও বিকাশমানতার পথকে রুদ্ধ করা হয়েছে। অথচ প্রাণ ও প্রকৃতির অসীম বিস্তার ও সম্পর্ককে জনগণের যাপিতজীবনের ব্যাকরণ দিয়ে জানাবোঝার ভেতর দিয়েই সত্যিকারের টিকে থাকবার রসদ ও কারিগরি তৈরি হয়। তখনই কেবল তাকে টেকসই বা স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন বলা যায়। IMG_0704

বক্তারা আরও বলেন, প্রতিবেশ প্রক্রিয়া এমন এক জটিল চলমানতা যেখানে মানুষ, পোকা, শামুক, কুমীর, হাস, ধান, ব্যাঙের ছাতা সকলেই এর সাথে নিজস্ব ধরণের ভিতর দিয়ে বিরাজিত। প্রাণ ও প্রকৃতির জটিল সম্পর্ক এবং পরিসরকে বিবেচনা করে বাংলাদেশে কোন রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি। বৃহৎ বাঁধ, সেতু, সড়ক পথ, বৃহৎ অবকাঠামো, কারখানা স্থাপন, বর্জ্য নিষ্কাশন, বাণিজ্যিক কৃষি খামার, চুক্তিবদ্ধ চাষ, ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, বহুজাতিক খনন, তেল গ্যাস প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, আধুনিক কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচী, সবুজ বিপ্লব, বিনোদন পার্ক ইত্যাদি নানা কিসিমের উন্নয়ন প্যাকেজগুলো নিদারুণভাবে দেশের প্রাণের বৈচিত্র্যময় উৎস  ও বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করেছে এবং করে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সবুজ বিপ্লব কর্মসূচী মাকড়সা, প্রজাপতি, শামুক কেঁচো, পতঙ্গ সব হত্যা করে চলেছে। ‘আগাছানাশকের’ ব্যবহারের নামে নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে অগণিত শাক ও ঔষধি লতাগুল্ম। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২০ প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে আরো ৪৫ প্রজাতির মাছ হুমকির সম্মুখীন। দেশী মাছের বসত ও বিচরণভ’মি নিশ্চিহ্ন করে কেবলমাত্র অধিক শস্য ফলানোর নামে কর্পোরেট বিষ বাণিজ্য চাঙ্গা রাখতে আমাদের মাছবৈচিত্র্যের বিকল্প হিসেবে তেলাপিয়া-গ্রাস কার্প-থাই-পাঙ্গাস-আফ্রিকান মাগুরের মতো যে আগ্রাসি মৎস্য উন্নয়ন কর্মসূচী চালু হয়েছে তা কি কোনভাবেই আমাদের মাছ জীবনের বিকল্প। গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, প্রাণ প্রকৃতি ও প্রতিবেশের ন্যায়বিচার সুরক্ষায় দরকার রাষ্ট্রব্যাপী মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক জাগরণ। উন্নয়ন কি বিকাশের শর্তকে আজ প্রাণবৈচিত্র্যের অসীম বিস্তার ও শক্তির চোখে দেখা অভ্যাস করতে হবে। জনগণ, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সংঘ, এজেন্সি কি বাস্তুসংস্থান সকলকেই। IMG_0593

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রতিবেশ এবং প্রাণবৈচিত্র সংরক্ষণ গবেষক পাভেল পার্থ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লুপ্ত ধানের সংরক্ষক জাতীয় পরিবেশ প্রাপ্ত কৃষক ইউসুফ মোল্লা, পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, রাজনৈতিক ও তেল গ্যাস বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স, পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: লেলিন চৌধুরী, কৃষিবিদ ড. নিয়াজ পাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক  জাহেদা আহমদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বারসিকের কর্মসূচী কর্মকর্তা ও পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading