
মৌমাছির রাজ্যে
গাছগাছালি, উদ্ভিদ, প্রাণী এবং আরো অনেক কিছু নিয়েই আমাদের ধরণী। কিছু প্রজাতি আছে আমাদের বেশ পরিচিত এবং কিছু অপরিচিত। আজকে আমাদের আলোচনা অতিপরিচিত এক পতঙ্গ নিয়ে যার নাম মৌমাছি বা ‘Honey Bee’। চলুন এর সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।
মৌমাছির ইংরেজি নাম- Honey Bee ।বৈজ্ঞানিক নাম – Apis Mellifera Linnaeus আর ওর্ডার নাম- Hymenopter। Honey Bee মূলত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিচিত একটি পতঙ্গ। Hymenopter প্রজাতির এই মৌমাছিগুলো মানুষ এবং প্রকৃতির উপর এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মূলত এই পোকাটি নিয়ে মানুষের কৌতূহল আরো প্রায় হাজার বছর আগে থেকেই। কারণ,এরা যে মধু আহরণ করে তা বেশ মজাদার আর পুষ্টিকর।
এবার মধু সম্পর্কে জানা যাক। মধু হচ্ছে এক প্রকার ঘন তরল পদার্থ যা মৌমাছি ফুলের তরল অংশ (Nectar) থেকে পেয়ে থাকে। যখন অনেক প্রজাতির মৌমাছি ফুলের আভ্যন্তরীণ রস/পানি (Nectar) সংগ্রহ করে, তখন মৌমাছি তা পরিশোধণ করে এবং তা হতে মধু উৎপাদন করে।
মৌমাছি মূলত সামাজিক পোকা। এরা সমাজবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে। এরা মূলত ৩ প্রকার।
১. রাণী/ স্ত্রী মৌমাছি, যা ডিম পারে
২. পুং মৌমাছি,যেগুলো রাণী মৌমাছির কাজে সাহায্য করে

৩. কর্মী মৌমাছি, যেগুলো মৌচাকের অভ্যন্তরে বিভিন্ন উৎপাদন ও রক্ষীমূলক কাজ করে।
একটি মৌচাকের ভিতর শুধু একটিই স্ত্রী মৌমাছি থাকে যা ২০ মিলিলিটার থেকে কিছুটা বেশি( বড় হয়) আর এরা দিনে প্রায় ১৫০০ ডিম পারতে পারে। ডিম পারার প্রায় ৩-৪ দিন পর ডিম থেকে লার্ভা বের হয় এবং কর্মী মৌমাছি দ্বারা প্রতিপালিত হয়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে লার্ভাগুলো এবং এক পর্যায়ে পরিপূর্ণ মৌমাছিতে পরিপূর্ণ হয়।
অন্যদিকে দেখা যায়, স্ত্রী ও পুং মৌমাছিগুলো প্রধানত জন্মাবস্থায় কর্মী মৌমাছি থেকে বড় হয় এবং ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ হয়। স্ত্রী মৌমাছিগুলো পূর্ণাঙ্গ হতে সাড়ে ১৫ দিন, পুংদের ২৪ দিন এবং কর্মীদের ২১ দিন লাগে লার্ভা ও মূককীটের জন্য। নতুন কিংবা পুরাতন রাণী মৌমাছিরা মৃত্যু মুখে কিংবা বৃদ্ধ বয়সে কর্মী মৌমাছি দ্বারা প্রতিপালিত হয়।
মজার কথা হলো, কুমারী মৌমাছিরা পুং মৌমাছির সাথে বিবাহবৃত্তিতে আবদ্ধ হয় ও ডিম পাড়ে!!! এতে কুমারী ও পুং মৌমাছি যুগবন্ধনও গঠন করে।
একটি স্ত্রী মৌমাছি ৩-৫ বছর বাঁচে।পুং মৌমাছি প্রত্যেক শীতের আগে মারা যায় এবং কর্মীরা বেশ কয়েকমাস বাঁচে।
কাজের কথায় আসলে দেখা যায় যে, বয়ষ্ক স্ত্রী মৌমাছিরা লার্ভাদের জন্য তাদের মুখ চোষা ও স্তন্যদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। লার্ভাগুলো সেই চোষা থেকে পাওয়া পদার্থ বা তরলগুলো গলধঃকরণ করে। পুং মৌমাছিরা এসব কাজে স্ত্রী মৌমাছিকে সাহায্য করে। কর্মী মৌমাছিরা মূলত বিভিন্ন ফুলে, ভ্রমণ করে পরাগরেণু ও ফুলের আভ্যন্তরীণ রস সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে এসব পষ্পরেণু ও আভ্যন্তরীণ রসগুলো মৌচাকে রেখে দেয়। মৌচাকে থাকা পুষ্পরেণুর অংশকে ”Pollen Basket” এবং ফুলের আভ্যন্তরীণ রসকে “Honey Sac” বলা হয়ে থাকে।


