আবর্জনা দিয়ে তৈরি হবে ভবন

আধুনিক শহরগুলো প্রতিদিনই বিশাল পরিমাণে আবর্জনা তৈরি করছে, যা বিরাট একটা সমস্যা। কিন্তু ভবিষ্যতে এই আবর্জনা কি সংকট তৈরির পরিবর্তে শহর গড়ে তোলার কাজে লাগানো সম্ভব? নগর নকশাবিষয়ক গবেষক মিশেল জোয়াকিম এমন একটি পদ্ধতির ওপর আলোকপাত করেছেন, যেখানে তা পরিণত হবে মূল্যবান সম্পদে।
গবেষকদের মতে, বহুমুখী কারণেই গড়ে উঠেছে শহর। এর মধ্যে প্রথমটি ছিল, একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অপরিহার্য কিছু সম্পদের ওপরে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা। এ ছাড়া প্রার্থনার জায়গা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা সামরিক প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা প্রশ্নে শহরের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু আধুনিক এই যুগে শহর গড়ে তোলার সময় সর্বপ্রথম বিবেচনায় আনা হয় শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্থানটির গুরুত্বের ওপর। আর এই শিল্পকারখানার কারণে পরবর্তী সময়ে শহরের পরিবেশের ওপর যে প্রভাব পড়ে, তা ভয়াবহ। সংশ্লিষ্ট শহরের নিজস্ব গণ্ডির পাশাপাশি এর বাইরে অনেক দূর বিস্তৃত এলাকা পর্যন্ত পরিবেশদূষণের জন্যও বড় কারণ হলো শহরের আবর্জনাবাহী কোনো জলপ্রবাহ।517737008_c_570_411
বর্তমানে বিশ্বের শহরগুলোতে আবর্জনা উৎপাদনের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চীন, ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে দ্রুত নগরায়ণের ৬ শতাংশ হারে আবর্জনা উৎপাদন বাড়ছে। বিশেষ করে মুঠোফোন, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ বিভিন্ন সামগ্রী থেকে যে ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, তা বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আবর্জনা সমস্যার সমাধানে এরই মধ্যে অনেক ধারণাই দাঁড় করিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এর মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি উপায় হচ্ছে, এসব বর্জ্য বা আবর্জনাকে শহরের ভবন বা অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের উপকরণে রূপান্তর করা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নগর গবেষণাবিষয়ক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান টেরিফর্ম ওয়ান সেই জায়গা থেকেই কাজ শুরু করেছে। তারা এমন শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, যা গড়ে তোলা হবে আবর্জনা থেকে। রাশি রাশি আবর্জনাকে রূপান্তর করা হবে ভবনের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ব্লকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবনের ব্লক তৈরির জন্য বিশাল আকৃতির বিশেষায়িত থ্রিডি প্রিন্টার তৈরি করা যেতে পারে। এটি আবর্জনা প্রক্রিয়াজাত করে প্রয়োজনীয় আকৃতির ব্লক তৈরি করবে। তবে এ ধরনের আহামরি কোনো প্রযুক্তি তৈরি না করলেও চলবে। বর্তমানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আবর্জনা প্রক্রিয়াজাত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও বিভিন্ন আকৃতির ব্লক তৈরি সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো আবর্জনাকে প্রয়োজনীয় আকৃতি দিতে পারবে। এ জন্য ব্যবহার করা যাবে কম্পিউটার দিয়ে তৈরি নকশা।
ভবনের বিভিন্ন অংশ যেমন গম্বুজ, জানালা ও দরজার ওপরের অংশ ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন ধরনের আবর্জনার ব্লক তৈরি করা যেতে পারে। যেমন জানালার জন্য স্বচ্ছ ব্লক তৈরি করা যাবে প্লাস্টিক দিয়ে, আবার অস্থায়ী অংশ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে জৈব আবর্জনা। তবে ভবনের প্রাথমিক গঠনে ব্যবহার করতে হবে ধাতব আবর্জনার ব্লক। বিবিসি।

সূত্রঃ http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-05-29/news/355934

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics