※কোরবানীর বর্জ্য ও পরিবেশ দূষণ※
আর কিছুদিন পরেই মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল আযহা বা কোরবানীর ঈদ৷ ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি ৷ রোজার ঈদের চেয়ে এই ঈদের আনন্দ ও আনুষ্ঠানিকতা অন্যরকম৷ মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনে বিত্তবান মুসলিমগণ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানী দিয়ে থাকেন৷ কোরবানীর মাধ্যমে মুসলমানরা মনের কালিমা, পাপ-পঙ্কিলতা ও যাবতীয় লোভ-লালসা বিসর্জন দিয়ে পরিচ্ছন্ন হন৷ মনের পরিচ্ছন্নতার সাথে সাথে এমন পরিচ্ছন্নতা কিন্তু বাইরের জগত তথা পরিবেশের জন্যও প্রয়োজন৷ ঈদের দিন বা তার পরবর্তী সময়ে সারাদেশে লাখ লাখ পশু কোরবানী হবে৷ এসব কোরবানীকৃত পশুর বর্জ্য, রক্ত ও নাড়িভুড়ি যদি সঠিক উপায়ে নিষ্কাশন না করা হয়, তবে তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ৷ এসব উচ্ছিষ্টের কারনে পরিবেশ নোংরা ও দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ কোরবানীর আগে ও পরে রাজধানী শহর ঢাকাসহ সারাদেশের শহর ও গ্রামে সৃষ্টি হয় মারাত্মক দূর্গন্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ৷ পশুর বিষ্ঠা ও কোরবানী পরবর্তী বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার কারণে এই অস্বস্থিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয় ৷ অনেক জায়গায় বিশেষ করে নদীতীরবর্তী এলাকায় বর্জ্য ও রক্ত সরাসরি নদী বা খালের পানিতে ফেলা হয়, যা পানি দূষণের অন্যতম কারন ৷ তাছাড়া খোলা জায়গায় রক্ত ও নাড়িভুড়ি ফেলতেও দেখা যায় ৷ ফলে চারপাশে মারাত্মক দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয় ৷ মানুষজন চলাচলে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়৷ পশুর রক্ত ও বর্জ্য রোগজীবাণু জন্মানোর জন্য একটি উত্তম পরিবেশ ৷ রক্তের মধ্যে সহজেই সবধরনের জীবানু জন্মাতে ও বংশবৃদ্ধি করতে পারে৷ পরিবেশে রোগজীবাণু বেড়ে যায় এবং মানুষ ও পশুপাখি সহজেই এসব জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয়৷ পশু জবাইয়ের স্থান সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে সেখানেও সৃষ্টি হতে পারে দূর্গন্ধ, জন্মাতে পারে রোগজীবাণু ৷ কোরবানী করতেই হবে, তা আল্লাহপাকের বিধান ৷ তবে তা যেন পরিবেশ দূষনের কারণ না হয়৷ মহানবী (সঃ) ও আল্লাহপাক সুন্দরকে ভালোবাসেন৷ মহানবী(সঃ) উত্তম পরিবেশকে গুরুত্ব দিতেন ৷ তিনি বলেছেন,“পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ৷” তাই পরিবেশকে সুন্দর রাখাও এবাদত৷ পরিবেশটা আমাদের৷ এই পরিবেশের ভালোমন্দের সাথেই আমাদের ভালোমন্দ নির্ভর করে৷ আমাদের পরিবেশটাকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে৷ কোরবানীর পূর্ব ও পরবর্তি সময়ের কিছু সচেতনতায় আমাদের পরিবেশটা বাঁচতে পারে দূষণের হাত থেকে৷ – নির্দিষ্ট ও পরিষ্কার স্থানে কোরবানী দিতে হবে৷ – কোরবানীর পর ঐ স্থানের যাবতীয় বর্জ্য ও রক্ত পরিষ্কার করতে হবে ৷ – বর্জ্য,রক্ত বা নাড়িভুড়ি কোনভাবেই নদী, পুকুর বা খালের পানিতে ফেলা যাবেনা৷ – খোলা জায়গায় এসব ফেলা যাবেনা৷ – সঠিক নিয়মে গর্ত করে মাটিচাপা দিতে হবে৷ – শহরের কোন নালায় এসব ফেলা যাবেনা৷ – নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ও ময়লার ভ্যানে ফেলতে হবে৷ – পশুর বিষ্ঠাও একই ভাবে পরিষ্কার করতে হবে৷ আমাদের কোরবানীর কারনে যদি মানুষজন কষ্ট পায়, নিশ্চয় আল্লাহ পাক তা পছন্দ করবেননা৷ তাই আমাদের সচেতন হতে হবে৷ সবার ঈদ ভালো কাটুক৷ ধনী-গরীব সবাই মিলেআনন্দ করুন এই প্রত্যাশায় সকলকে “ঈদ মোবারক” ও হিন্দু ধর্মালম্বীদের স্বারদীয় দূর্গাপূজার শুভেচ্ছা৷
হারুন- অর- রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক (ডোমেস্টিক ও পেট), প্রাধিকার৷