সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড : বাংলার অজানা বিস্ময়

বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে বাংলাদেশেই রয়েছে ” সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড ” বা SONG নামে বিশ্বের অন্যতম গভীরতম খাদ !!!! এটা বিশ্বের সেরা ১১টি গভীর খাদ বা ক্যানিয়ন এর মাঝে অন্যতম তবে অনেকে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গভীর খাদও বলে থাকে । এটি  আজ থেকে প্রায় ১২৫,০০০ বছর আগে তৈরি হয়েছে

কি অবাক হচ্ছেন ? আরও অবাক হবেন যখন জানতে পারবেন সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে গেলে আপনি তিমি ডলফিন এর উপস্থিতি দেখতে পারবেন !!!!

d3-copy
সাগরের সৌন্দর্য তিমি ডলফিন।
ছবি: রুবাইয়াত মনসুর মোগলি

সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড আসলে বঙ্গোপসাগরের তলায় একটি গভীর উপত্যকা বা মেরিন ভ্যালি। একে আন্ডার ওয়াটার ক্যানিয়নও বলা হয় । বঙ্গোপসাগরের মাঝে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড এর সর্বমোট এলাকা প্রায় ৩,৮০০ বর্গকিলোমিটার ।”সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড ” মংলা/ সুন্দরবন এর দুবলার চর/সোনারচর থেকে প্রায় ৩০-৪০ কি.মি দূরে অবস্থিত ।

নামকরণ

বহু আগে ব্রিটিশরা সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড নামটি দেয়। এর কারণ হলো সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড যেখানে শুরু সেখানে হঠাৎ করেই পানির গভীরতা বেড়ে গেছে ,ব্রিটিশদের ধারণা ছিলো সমুদ্রের এই খাদের কোন তল নাই এজন্য বলেছিলো সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড

সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডকে স্থানীয়রা বলে নাই বাম ,সাগরে ফুট কিংবা মিটার না ওরা হিসাব করে বাম, দশ বাম, বিশ বাম, আর ঐ জায়গা নাই বাম ,মানে এই জায়গাটার কোন হিসেব নাই । জায়গাটা মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মতো। বাংলায় বলে অতল স্পর্শী।

দেখুন সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড এ পানির রং পরিবর্তন হয়ে কিভাবে নিজেকে আলাদা করে তুলেছে ,এই নীল পানি থেকেই সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড শুরু
দেখুন সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড এ পানির রং পরিবর্তন হয়ে কিভাবে নিজেকে আলাদা করে তুলেছে ,এই নীল পানি থেকেই সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড শুরু

পানির গভীরতা অন্যান্য অংশ থেকে সোয়াপ অফ নো গ্রাউন্ড এ বেশি বলে এর পানির রং সম্পূর্ণ ভিন্ন তাই ওখানে গেলেই বুঝতে পারবেন যে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড এর অংশ শুরু হয়ে গেছে । সাধারণ সমুদ্রের তলদেশ থেকে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড সবোর্চ্চ ১৩৪০ মিটার পর্যন্ত গভীর ।

কেন সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড বিখ্যাত

সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড এ ডলফিন
সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড এ ডলফিন

বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রানির অবাধ বিচরণের কারণে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড বিখ্যাত ।প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা এই গভীর খাদটি সমুদ্রের অন্যান্য অংশ থেকে গভীর বলে এখানে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর অভয়ারণ্য । তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য তিমি,পপাস ডলফিন পৃথিবীর বৃহত্তম ইরাবতী ডলফিন,গোলাপি পিঠকূজো ইন্দো প্যাসিফিক ডলফিন ও মশ্রিন পিঠের (পাখনাহীন) ইমপ্লাইস ডলফিন ।

আসলে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড ডলফিন পরপাস ও তিমির হটস্পট। ‘‘সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড’ পৃথিবীর একমাত্র সোয়াচ যেখানে এই তিনটি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী একসঙ্গে দেখা যায়।

সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড এর পরিচিতি এর পেছনে বাংলাদেশের যে প্রাণী বিজ্ঞানীর নামটি নামটি জড়িত তিনি হলেন ,রুবাইয়াৎ মনসুর (মুগলি)  বাংলাদেশীদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম এই জায়গাটির ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং একে একে নানা প্রজাতির ডলফিন এবং তিমির খোঁজ বের করেন। 

এতকিছু জানার পর নিশ্চয় কিভাবে ওখানে যাওয়া সেটা জানার জন্য মন আনচান করছে তাইনা ?

  • ঢাকা থেকে সরাসরি চলে যান মংলা ।
  • মংলা থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার ট্রলার সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড যায় মাছ ধরার জন্য তাই যেকোন ট্রলার নিয়ে চলে যান সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড। সামুদ্রিক সৌন্দর্য্য দেখতে জাহাজও পেতে পারেন মংলা গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন ।
  • সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে একটি নির্দিষ্ট এরিয়া আছে যেখানে রাতে মাছ ধরার নৌকা ট্রলারগুলো অবস্থান করে যদি সম্ভব হয় তাহলে সাগরে একটা রাত কাটিয়ে আসার চেষ্টা করবেন ,সেই অনুভুতিটা নিশ্চয় অসাধারণ কিছু একটা হবে , তবে ট্রলার ঠিক করার আগে বিস্তারিত কথা বলে নিবেন ।
  • এছাড়া কুয়াকাটা থেকে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড প্রায় ৯০ কি মি দুরে । কুয়াটাকা থেকে সরাসরি যাওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারটা নির্ভর করে ট্রলার পাওয়ার উপর।

ছোট একটি টিপস দেই ,সী-গাল পাখির অবস্থান নির্ভর করে অনেক সময় ডলফিন বা তিমির অবস্থান বোঝা যায় । যদি দেখেন সী-গাল পাখি পানির কাছাকাছি চক্কর দিচ্ছে তাহলে আশাপাশে ডলফিন এর অবস্থান অনুমান করা যায় ।

আরেকটা কথা বলি এই সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডেই নাকি  ১৮৬৩ সালে গ্যাডফ্লাই নামে একটা ২১২ টনি ব্রিটিশ গানবোট ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমান ধনরত্ন নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় ।

ওখানে গিয়ে আবার ধনরত্ন খোজা শুরু করে দেবেন না তবে কিছু পেলে কিন্তু ফিফটি ফিফটি ?

তা যাচ্ছেন কবে ? আর হ্যাঁ যদি কখনো ঘুরতে যান তাহলে অবশ্যই পরিবেশের খেয়াল রাখবেন ,কোন আবর্জনা সমুদ্রে ফেলবেন না  এটা আমার একটা অনুরোধ । আমাদের দেশটাতো আমাদেরই সুন্দর রাখতে হবে তাইনা ?

লেখাঃ বিল্লাহ মামুন, প্রকৃতিপ্রেমী এবং ব্লগার।

সবগুলো ছবির তুলেছেন ফটোগ্রাফার সাব্বির ফেরদৌস

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics