সেতুর জন্য বিলের মুখে বাঁধ, তলিয়ে গেছে ফসল
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের গুয়ারির বিলে ছোট একটি সেতু নির্মাণের জন্য পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালের মুখে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে মুলাডুলি, দুবলাচরা, পতিরাজপুরসহ আশপাশের গ্রামের কৃষকদের কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
একাধিক বাসিন্দা জানান, ঈশ্বরদী পৌর এলাকার কৃষি কলেজ থেকে শুরু করে মুলাডুলির পতিরাজপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটারজুড়ে গুয়ারির বিল। পৌর এলাকাসহ অরণকোলা, আড়পাড়া, আড়কান্দি, নারিচা, ঢুলটি, বেদুনদিয়া, বাঘহাসলা প্রভৃতি গ্রামের পানি এই বিলে জমা হয়। বিলের মুখে রয়েছে একটি সরু খাল। এই খাল দিয়ে পানি পাশের কমলা নদীতে পড়ে।
গ্রামবাসী জানান, এখন বর্ষাকাল। বর্ষাকালে বিলে এমনিতেই পানি বেশি থাকে। বিষয়টি জানা সত্ত্বেও ঈশ্বরদী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় (এলজিইডি) অসময়ে (বর্ষাকালে) বিলের মুখের সীমানা ঘেঁষে পাকা রাস্তা তৈরি করেছে। সেই সঙ্গে ১০-১২ দিন আগে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালের মুখে একটি ছোট সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেতু তৈরির জন্য খালের মুখে মাটি কেটে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে বিলের আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে কৃষকদের ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, গুয়ারির বিলে আবাদ করা আখ, ধান, ঢ্যাঁড়স, শিমসহ বিভিন্ন শাকসবজি পানির নিচে ডুবে আছে। ফসল বাঁচাতে কৃষকেরা রাস্তার একাংশ কেটে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু রাস্তাটি অনেক উঁচু হওয়ায় পানি তেমন নিষ্কাশিত হচ্ছে না।
দুবলাচরা গ্রামের কৃষক সিরাজ প্রামাণিক বলেন, গুয়ারির বিলে তাঁদের একটি গভীর নলকূপের আওতায় ১০০ বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে।
একই গ্রামের ইব্রাহিম প্রামাণিকের আট বিঘা জমির আখ পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান তিনি। মুলাডুলি গ্রামের আসাদুল ফকির বলেন, বিলের জলাবদ্ধতার কারণে তাঁর এক বিঘা আয়তনবিশিষ্ট পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
পতিরাজপুর গ্রামের কৃষক মুরাদ মালিথা জানান, ঈশ্বরদী উপজেলার এক-তৃতীয়াংশ ধান গুয়ারির বিলে উৎপন্ন হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে বিলের মুখে বাঁধ দিয়ে সেতু নির্মাণের ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে উন্নয়নের চেয়ে অপউন্নয়ন হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম মালিথা দাবি করেন, বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতা হলেও ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। কৃষকেরা ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এলজিইডির ঈশ্বরদীর প্রকৌশলী রুমেল হায়দার বলেন, গ্রামবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাড়ে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে দুবলাচরা গ্রামে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টির কারণে বিলে পানি জমে গেছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মাস খানেকের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে। তখন আর কৃষকদের সমস্যা থাকবে না।