সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে চলছে গাছ কাটার উৎসব

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী, কোবাদক ষ্টেশন সহ অভয়ারন্যে এক শ্রেনীর মাছ ও কাঁকড়া ধরা শিকারীরা অবাধে বনের গাছও সাবাড় করছে।

শ্যামনগরের পুষ্পকাটি ও নটাবেকী বন টহল ফাড়ীর মাধ্যমে এসব কাঠ পাচার কারী চক্র বেশী পরিমানে গাছ কেটে পাচার করছে বলে জানা গেছে। আর এসব শিকারীদের সাথে মিশে থাকা একটি চক্র সুযোগ বুঝে সুন্দরবনের হরিন শিকারও অব্যহত রেখেছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবনের সাথে জড়িয়ে থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করা শিকারীরা মুখ খুলতে নারাজ। তাদের সংক্ষিপ্ত জবাব, অপরাধ হলেও কর্মকর্তাদের খুশি করেই তারা সব কিছু সামলে চলে।image_1261_353542

মাছ ধরা জেলে, মৌয়ালসহ বনজীবিদের অভিযোগ, সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪টি ষ্টেশন থেকে কাকড়া ও সাদা মাছ ধরার অনুমোতি নিয়ে তারা বনে প্রবেশ করেন। বনে ২/৩ দিন কাজ করার পর স্টেশন থেকে কর্মকর্তারা তাদের সাথে যোগাযোগ করে। পরে তারা অতিরিক্ত ৩/৪শ টাকা দিলে গরান, কড়ই, শালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ বৃক্ষ কাটার সুযোগ পায়। পরে সুযোগ বুঝে পাচার কারীরা কেটে রাখা এসব গাছ নৌকার নিচে ও বিশেষ কায়দায় পানিতে ডুবিয়ে নদী পার করে এনে মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে প্রতিটি স্টেশনের আওতায় ২/৩ শ জেলে মাসে ১৫ দিন সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী, খালে, মাছ আর কাকড়া ধরে থাকে। বনে প্রবেশ করতে তাদের প্রথমে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে অনুমোতি গহন করতে হয়। ২৫ দিনের জন্য জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা রাজস্বের নামে আদায় করা হলেও ১৫ দিনের পরিবর্তে মাত্র ২/৩ দিনের টাকা রাজস্ব হিসাবে সরকারী কোষাগারে জমা পড়ে। বাকি টাকা চলে যাচ্ছে বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেটে।

শ্যামনগরের জেলে সংগঠন (ক্ষুদ্র মত্স্যজীবি সমিতি) এর সভাপতি মো: আয়উব আলী জানান, সম্প্রতি স্টেশন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাছ কটায় সহায়তা করাসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠ ভাবে তদন্ত হলে বন কর্মকর্তাদের অনিয়ম একশ ভাগ প্রমানিত হবে।

তিনি আরো জানান, মাছ, কাকড়া ধরার সুবাধে এক শ্রেনীর পেশাদার হরিন শিকারী ও কাঠ পাচারকারী চক্র অবাধে সুন্দরবনের যে কোন জায়গায় এমন কি অভয়ারন্য এলাকা পুষ্পকাটী ও নটাবেকী এলাকায় প্রবেশ করে হরিন শিকার সহ কাঠ কেটে নিয়ে আসছে।

সুন্দরবনঘেষা শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা শফিউল আযম লেলিন জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দূর্নীতি আর অতিরিক্ত লোভের কারনে যে কেউ যখন তখন সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঠ পাচার সহ হরিন শিকার করতে পারে। তাছাড়া সুন্দরবনে যত্রতত্র প্রবেশ অধিকার থাকায় সুন্দরবনে বনদস্যুদের তত্পরতাও বেড়ে গেছে। সুন্দরবনের অভয়ারন্য এলাকা পুষ্পকাটী ও নটাবেকী বন টহল ফাড়ীতে বনদসু্যরা অধিকাংশ সময় রাত কাটিয়ে থাকে। সেখানে শিকার করা হরিনের মাংস রান্নকরে ভূরিভোজ করার অভিযোগ রয়েছে। পুষ্পকাটী টহল ফাড়ীর কর্মকর্তা খবিরউদ্দীন গত ২৭/০৫/২০১৩ তারিখ ১০ কেজি হরিনের মাংস্ব সহ ৩ পাচার কারীকে আটক করার পর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় ওই টহল ফাড়ীর একজন কর্মচারীর মাধ্যমে তিনি জেনেছেন।

এবিষয়ে নাম গোপন করে ওই টহল ফাড়ীর এক বন কর্মচারী বলেন, আমরা গভীর বনে থাকি। আমাদের কাছে উন্নত কোন অস্ত্র ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় অনেক সময় আমরা অনেক কিছু দেখেও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলে থাকি।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা কেরামত আলী জানান, ঢালাওভাবে অভিযোগগুলি সঠিক না। তবে দুই একটি বিছিন্ন ঘটনার কথা স্বীকার করেন বলেন, অভিযোগ পেলে তদনত্ম করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়ে থাকে।

সূত্রঃ দৈনিক কালের কণ্ঠ (০২/০৬/২০১৩)

http://www.kalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1261&cat_id=1&menu_id=0&news_type_id=3&news_id=353542

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics