সমুদ্রের অম্লত্ব বৃদ্ধি ; গ্লোবাল ওয়ারমিং এর নতুন নিয়ামক !!!!!
আমাদের ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন মানবসৃষ্ট কারণ এবং বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন আলোক রাসায়নিক (photochemical reaction) বিক্রিয়ায় উদ্ভূত গ্রীণ হাউজ গ্যাসই যে শুধুমাত্র পৃথিবীকে উষ্ণ করে তুলছে বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে এখন আর একমত পোষণ করছেন না, বরং এই গ্রীণ হাউজ গ্যাস সমদ্রের জলভাগের অম্লত্ব বৃদ্ধি করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে চলেছে।সমুদ্রের অম্লত্ব বৃদ্ধির (acidification of ocean) প্রভাবে কিভাবে পৃথিবীকে উষ্ণতর করে তুলছে নতুন এক গবেষণায় তা বেরিয়ে এসেছে। সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধি সামুদ্রিক বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে চলেছে, যার প্রতিক্রিয়ায় প্রভাবিত হচ্ছে জলবায়ু। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি।
সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধি সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্যের জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, দিন দিন সামুদ্রিক কোরালসমূহ সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান অম্লপানিতে দ্রবীভূত হয়ে যাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত সামুদ্রিক প্রানীদের জন্য এবং সমুদ্রপাড়ের মানুষ যারা সামুদ্রিক জীবদের উপর নির্ভরশীল তাদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা এতদিন মনে করতেন, কার্বন ডাই অক্সাইড যা সমুদ্রের পানি দ্বারা শোষিত হয়ে সমুদ্রে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে জমা হয় এবং তা সমুদ্রের ক্ষারীয় জলের সাথে বিক্রিয়া করে মোটামুটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পরে এবং ফলস্বরূপ তা জলবায়ুকে রাসায়নিকভাবে প্রভাবিত করে না। কিন্তু সমসাময়িক গবেষণায় দেখা গেছে, অম্লতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের ক্ষুদ্র প্রাণী যেমন ফাইটোপ্লাঙ্কটনের উপর ক্রিয়া করে যা সমগ্র ভূমণ্ডলকে আদতে রক্ষা করে চলেছে। এটি সমুদ্রে ডাইমিথাইল সালফাইড (DMS) নামে একধরনের রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে, যা সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরিস্থ বায়ুমণ্ডলে সঞ্চালিত হয়ে সূর্যকিরণকে প্রতিফলিত করে এবং পৃথিবী পৃষ্ঠকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।
জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সিটিটিউটে ক্যাথরিনা শিখ ও তার দলের এক গবেষণায় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের প্রক্ষিতে দেখান যে, সমুদ্রের পানির অম্লতা বেড়ে যাওয়ার কারনে ফাইটোপ্লাঙ্কটনরা পূর্বের তুলনায় কম ডাইমিথাইল সালফাইড উৎপন্ন করছে। এই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একটি জলবায়ু মডেল দাঁড় করিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, শিল্পায়ন পূর্ব সময়ের চেয়ে ২১০০ নাগাদ ১৮ শতাংশ কম ডাইমিথাইল সালফাইড তৈরি হবে। ধারনা করা হচ্ছে, যদি পরবর্তী সময়গুলোতে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ দ্বিগুণ হয় তাহলে তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যাবে । এই পরিবর্তন বর্তমান সময়ের সামুদ্রিক গবেষণায় স্পষ্টত উঠে এসেছে যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করে চলেছে। পরিবর্তনের এই মাত্রাকে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশবিদ্যালয়ের পল পিয়ারসন বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন এবং বায়ুমণ্ডলের এর প্রভাব তাঁর আরেক গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন।
সুত্র : newscientist.com অবলম্বনে।
সাইফুর রহমান সুমন
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক