শুধু আকারে নয়, বুদ্ধিতেও এগিয়ে হাতি !!
মাহবুব রেজওয়ান
সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রাণীকে পোষ মানিয়েছে। মানুষ প্রায় সব ধরনের প্রাণীর সাথেই যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সফল হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে হয়তো হয়নি। বিভিন্ন প্রাণীর সাথে মানুষের যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করে অপর প্রাণীটির বুদ্ধিমত্তার উপর। বিজ্ঞানীরা যুগ যুগ ধরেই এই ব্যাপারটি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি, হাতি নিয়ে তারা নতুন কিছু তথ্য আবিস্কার করেছেন।
হাতি মানুষের অঙ্গভঙ্গি তথা আকার ইঙ্গিতের মাধ্যমে প্রদানকৃত তথ্য বুঝতে পারে। সব থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে এর জন্য হাতিকে আলাদাভাবে কোন প্রশিক্ষন দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
এই নতুন আবিস্কারটি হাতিকে একটি অভিজাত শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই অভিজাত শ্রেণীতে আগে থেকেই রয়েছে বিড়াল, কুকুর এবং বোতল নাক ডলফিন। এই শ্রেণীর সদস্যদের বলা হয় মানুষের পরে সবথেকে বুদ্ধিমান প্রাণী। অনেকে হয়তো বলবেন শিপ্পাঞ্জির কথা। তবে শিপ্পাঞ্জির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিছুটা ভিন্ন। শিপ্পাঞ্জিকে মানুষের সাথে দীর্ঘদিন রেখে প্রশিক্ষন দিয়ে বুদ্ধিমান করে তোলা সম্ভব। কিন্তু কুকুর কিংবা বিড়ালের মতো প্রকৃতি প্রদত্ত বুদ্ধিমত্তা এদের নেই। মানুষের সাথে তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে বন্য অবস্থায় শিপ্পাঞ্জি ততটা পটু নয়।
St. Andrews ইউনিভার্সিটির রিচার্ড বায়ার্ন এবং তার সহকর্মী আন্না স্মেট ১১ টি আফ্রিকান হাতির একটি দলের উপরে একটি পরীক্ষা চালান। হাতির দলের সদস্যরা কিছু শব্দগত আদেশ-নির্দেশের সাথে পরিচিত থাকলেও ইশারা অথবা ইঙ্গিতের ব্যাপারে আগে থেকে তাদের কোন প্রশিক্ষন ছিল না। এই পরীক্ষার উদ্দেশ্যে কয়েকজন পর্যটককে জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের কাছাকাছি একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। গবেষক দলটি বিভিন্ন কন্টেইনারে আগে থেকে হাতির জন্য কিছু সুস্বাদু খাবার রেখে দিয়েছিলেন। এরপর পর্যটকের দলটি হাতির দলটিকে সঠিক কন্টেইনারের দিকে ইঙ্গিত করতে থাকে।
এই পরীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই হাতির দলের সদস্যরা সঠিক কন্টেইনারটি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছে। দলটির ১১ সদস্যের মাঝে ৫ টি হাতি কন্টেইনার খোঁজার পরীক্ষায় ১০০ ভাগ সফল। দলটিতে ১ বছর বয়সী একটি হাতিও ছিল। সেই হাতিটিও কন্টেইনার খোঁজার এই পরীক্ষায় ৭০ ভাগ ক্ষেত্রেই সফল।
পরীক্ষাটি সম্পর্কে বায়ার্ন বলেন, ” যে ব্যাপারটি আমাদের সবথেকে বেশি অবাক করেছে তা হচ্ছে, তাদেরকে নতুন করে কিছু শেখানোর প্রয়োজন নেই। তাদের বোধশক্তি এতটাই প্রখর যে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তা একই রকম থাকে।” বায়ার্ন তার গবেষণাপত্রটি গত ১০ ই অক্টোবর একটি জার্নালে প্রকাশ করেন।
হাতির বুদ্ধিমত্তার পরিচয় এখানেই শেষ নয়। হাতি আয়নাতে নিজেদেরকে দেখে চিনতে পারে। শুধু তাই নয়। মানুষের চেহারাও তারা মনে রাখতে পারে। আপনি যদি কোন একটি হাতির সাথে খারাপ ব্যাবহার করেন, তাহলে পরবর্তী সাক্ষাতে হাতিটি আপনাকে তা খুব ভালভাবে তা বুঝিয়ে দিবে।
হাতি একটি সামাজিক প্রাণী। তাদের নিজেদের মাঝে অনেক আবেগ রয়েছে, ভালবাসা রয়েছে। একটি জটিল সামাজিক সম্পর্কে তারা আবদ্ধ থাকে। এই কারণে তাদের নিজেদের মাঝে ভাবের আদান-প্রদানের মাত্রা অন্যান্য প্রাণীদের থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি। এই কারণেই হয়তো মানুষের দেহভঙ্গি বা ইঙ্গিত বুঝতে হাতিদের খুব একটা কষ্ট হয় না। আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে হয়তো হাতিদের সম্পর্কে আমরা আরও অনেক কিছু জানতে পারব। যা মানুষের সাথে হাতির যোগাযোগকে আরও সহজ করবে।
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক
সূত্রঃ ইন্টারনেট