শব্দের অত্যাচার নিঃশব্দ ক্ষতি

সাইফুল ইসলাম খান

images (6)অন্তহীন দূষণে ডুবে আছে আমাদের জীবন। বায়ু দূষণ, নদী দূষণ, শব্দ দূষণ ইত্যাদি দূষণে যেন আমরা ক্রমান্বয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমাদের দেশে যেমন দূষণের ব্যাপকতা ও মাত্রা সীমাহীন, তেমনি অনেক দূষণের ক্ষতিও অপূরণীয়। শব্দ দূষণ এমনি এক ধরনের দূষণ, যা অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনে আমাদের জীবনে। ব্যস্ত নগরের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে গ্রামীণ জনপদের পথ-প্রান্তরও যেন এখন ভরে আছে নানা ধরনের শব্দ দূষণে। শব্দের অত্যাচারে মানুষের জীবনে অপরিমেয় নিঃশব্দ ক্ষতি হচ্ছে। বাস-ট্রাক, সিএনজি, টেম্পো-লেগুনা থেকে শুরু করে মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিক হর্ন যেমন নগরকে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি দেয় না, তেমনি নছিমন-করিমন-ভটভটি, ট্রলি ইত্যাদি এখন গ্রামের নিরিবিলি রাস্তাগুলোকে করে তুলেছে অসহনীয়। মাইকের বিকট আওয়াজ হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত চমকে দেয়। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষিজপণ্য সময়মতো বাজারজাত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের সড়ক অবকাঠামোগত কারণে ট্রাক-পিকআপ দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহন সহজসাধ্য নয়। এদিক বিবেচনা করলে ট্রলি ও নছিমন-করিমন বা ভটভটি কৃষিপণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং এর সুফল জাতীয় অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করেছে, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু এ যন্ত্রদানবগুলো যে পরিমাণ শব্দ সৃষ্টি করে, তার ক্ষতির পরিমাণ লাভের তুলনায় বেশি। আমাদের জন্য উন্নয়ন নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর উন্নয়নের একটি আবশ্যিক পূর্বশর্ত হিসেবে উন্নত যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা অপরিহার্য। কিন্তু একই সঙ্গে এসব যন্ত্রযান ব্যবহারে যথাযথ নির্দেশনাও মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণসীমার মাত্রা ৪০-৬০ ডেসিবেল। সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ৮৫ ডেসিবেল। এর ওপরে যে কোনো মাত্রার শ্রবণশক্তি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি ১০০ ডেসিবেল মাত্রার বেশি শব্দে কেউ যদি ১৫ মিনিটের বেশি সময় থাকে, তবে চিরতরে বধির হয়ে যেতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দে øায়ুতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হওয়া, শ্রবণেন্দি য় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এমনকি চিরতরে বধির হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। অথচ আমাদের নগর ও গ্রামীণ জীবনে যেসব যন্ত্রদানব প্রতিনিয়ত উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করে যাচ্ছে, তার মাত্রা কত এবং তা আমাদের কতভাবে ক্ষতি করে, কে রাখে তার হিসাব। ব্যক্তিস্বার্থে নিমগ্ন জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান নিশ্চয়ই অনেক ওপরে, তাই বলে কি কখনই আমাদের বোধোদয় হবে না! রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা, দায়িত্বপূর্ণ আচরণ ও পরস্পরের প্রতি ভালোবাসাই পারে আমাদের এ শব্দ দূষণ থেকে রক্ষা করতে।

সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ২০/০৬/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics