লাউয়াছড়ায় সাপ গবেষণা
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, শ্রীমঙ্গল
‘সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী সাপ বিষধর। দংশন করলে আর রক্ষা নেই। সুতরাং দেখামাত্র সাপ মেরে ফেলতে হবে। তাতে নিজের তো বটেই, সংশ্লিষ্ট অন্যদের জীবন রক্ষা পাবে।’- এমন দৃষ্টিভঙ্গি কমবেশি আমাদের প্রায় সবার। ফলে দেদার মারা পড়ছে নানা প্রজাতির সাপ। এতে এই প্রাণীটির অস্তিত্বই আজ হুমকির মুখে। অথচ প্রকৃতির উপকারী এই প্রাণী আমাদের নিজেদের স্বার্থেই টিকিয়ে রাখা দরকার।
সিলেটের শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া বনাঞ্চলও এর বাইরে নয়। এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৩৬ প্রজাতির সাপ, যেগুলোর বেশির ভাগই বিষধর নয়। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গাছগাছালির আড়ালে ও মাটির নিচে এগুলোর বসবাস। বাংলাদেশে সাপ নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি বললেই চলে। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের বন্য প্রাণী গবেষণা সংগঠন ‘ক্যারিনাম’ এবং বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ওরিয়ন সোসাইটি’ যৌথ উদ্যোগে এখানে প্রায় দেড় বছর ধরে সাপের ওপর গবেষণা চালিয়েছে। বেরিয়ে এসেছে সাপ সম্পর্কিত নানা তথ্য-উপাত্ত। ইউরোপিয়ান আন্তর্জাতিক ত্রৈমাসিক জার্নাল ‘অ্যাম্পোফিবিয়া-রেপটিলিয়া’র জানুয়ারি-মার্চ সংখ্যায় লাউয়াছড়ার ওই সাপ গবেষণার ওপর বিশেষ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন শাহরীয়ার সিজার রহমান।
কালের কণ্ঠের সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় শাহরীয়ার সিজার বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩৬ প্রজাতির সাপের বিচরণ লক্ষ করা গেছে। এগুলো হলো দুমুখো সাপ বা কেঁচো সাপ (দুই প্রজাতির), অজগর, সুতানলি, চেরাপুঞ্জি, চিনু, রঙিলা কেঁচো, সবুজ ফণীমনষা, বাদামি ফণীমনষা, ফণীমনষা (দুই প্রজাতির), কালনাগিনী, দুধরাজ, গেছো, পাইন্না, ঘরগিন্নি (তিন প্রজাতির), বনকোরাজ (দুই প্রজাতির), ডোরাযুক্ত বনকোরাজ, ব্যাম্বু ট্রিংকেট, শামুকখেকো, দাঁড়াশ (দুই প্রজাতির), পাহাড়ি, হিমালয়ের ঢোঁড়া, লালমাথা ঢোঁড়া, কালোমাথা ঢোঁড়া, শঙ্খিনী, কালকেউটে, গোখরা, প্রবাল এবং সবুজবোড়া সাপ। রঙিলা কেঁচো সাপটি বাংলাদেশে প্রথম লাউয়াছড়ায়ই পাওয়া গেছে। ২০১১ সালের মে মাসে শুরু হওয়া গবেষণাটি সম্পন্ন করতে প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে।’
শাহরীয়ার বলেন, মানুষের ধারণা কালনাগিনী সাপ মানেই বিষধর। কালনাগিনী আসলে এক প্রজাতির নির্বিষ সাপ। চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে সাপটি নিয়ে ভুল তথ্য প্রচারিত হওয়ায় মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু প্রজাতির সাপ বিষধর। তবে সেগুলোও একেবারে কোণঠাসা হয়ে না পড়লে সচরাচর মানুষকে ছোবল দেয় না।
গবেষণার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে শাহরীয়ার সিজার জানান, সাপ নিয়ে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাপ সম্পর্কে জানা এবং নিজেদের স্বার্থেই এগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সবাইকে সচেতন করা। দেশে কত প্রজাতির সাপ কোথায় কোথায় বিচরণ করছে, সে সম্পর্কে ধারণা তৈরি হলে সেই জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজটি করা সহজ হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যারিনামের প্রধান নির্বাহী ড. এস এম এ রশীদ বলেন, ‘সাপ নীরবে-নিভৃতে প্রকৃতির অনেক উপকার করে চলেছে। আমরা জরিপ করছি, বাংলাদেশের কোথায় কোথায় কী কী প্রজাতির সাপ আছে। তবে প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, দেশে শতাধিক প্রজাতির সাপের দেখা মেলে। আর এগুলোর মধ্যে কেউটে, গোখরা, শঙ্খিনী, শঙ্খচোর, সবুজবোড়া- এ রকম আট-দশটি প্রজাতিকে বাদ দিয়ে বাকিগুলো বিষমুক্ত।’ তিনি আরো বলেন, ‘দাঁড়াশ সাপের প্রধান খাদ্য ইঁদুর। ইঁদুর খেয়ে তারা ফসলের উপকার করছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘সাপসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী সব কিছুরই অস্তিত্ব আসলে নির্ভর করে তার প্রাকৃতিক আবাসস্থলের অবস্থার ওপর। আবাসস্থল ধ্বংস করা হলে প্রাণীগুলো অস্তিত্ব হারাবে। যেমন সবুজবোড়া বা টিয়েবোড়া প্রজাতির সবুজ রঙের সাপ কেবল লাউয়াছড়ার চিরসবুজ বনেই পাওয়া যায়। এই বন ধ্বংস করলে ওই বিশেষ প্রজাতির সাপটিও হারিয়ে যাবে। এরপর ধরা যাক অজগরের কথা। অজগর সাপ কিন্তু ছোটখাটো আকারের প্রাণী খায় না। সে মাঝারি আকারের প্রাণী যেমন বনমোরগ, মথুরা, মায়াহরিণ প্রভৃতি খায়। এখন যদি ওই বনে ওই প্রাণীগুলো না থাকে তাহলে খাদ্যাভাবে অজগরও বাঁচতে পারবে না।
সিলেটের শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া বনাঞ্চলও এর বাইরে নয়। এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৩৬ প্রজাতির সাপ, যেগুলোর বেশির ভাগই বিষধর নয়। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গাছগাছালির আড়ালে ও মাটির নিচে এগুলোর বসবাস। বাংলাদেশে সাপ নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি বললেই চলে। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের বন্য প্রাণী গবেষণা সংগঠন ‘ক্যারিনাম’ এবং বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ওরিয়ন সোসাইটি’ যৌথ উদ্যোগে এখানে প্রায় দেড় বছর ধরে সাপের ওপর গবেষণা চালিয়েছে। বেরিয়ে এসেছে সাপ সম্পর্কিত নানা তথ্য-উপাত্ত। ইউরোপিয়ান আন্তর্জাতিক ত্রৈমাসিক জার্নাল ‘অ্যাম্পোফিবিয়া-রেপটিলিয়া’র জানুয়ারি-মার্চ সংখ্যায় লাউয়াছড়ার ওই সাপ গবেষণার ওপর বিশেষ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন শাহরীয়ার সিজার রহমান।
কালের কণ্ঠের সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় শাহরীয়ার সিজার বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩৬ প্রজাতির সাপের বিচরণ লক্ষ করা গেছে। এগুলো হলো দুমুখো সাপ বা কেঁচো সাপ (দুই প্রজাতির), অজগর, সুতানলি, চেরাপুঞ্জি, চিনু, রঙিলা কেঁচো, সবুজ ফণীমনষা, বাদামি ফণীমনষা, ফণীমনষা (দুই প্রজাতির), কালনাগিনী, দুধরাজ, গেছো, পাইন্না, ঘরগিন্নি (তিন প্রজাতির), বনকোরাজ (দুই প্রজাতির), ডোরাযুক্ত বনকোরাজ, ব্যাম্বু ট্রিংকেট, শামুকখেকো, দাঁড়াশ (দুই প্রজাতির), পাহাড়ি, হিমালয়ের ঢোঁড়া, লালমাথা ঢোঁড়া, কালোমাথা ঢোঁড়া, শঙ্খিনী, কালকেউটে, গোখরা, প্রবাল এবং সবুজবোড়া সাপ। রঙিলা কেঁচো সাপটি বাংলাদেশে প্রথম লাউয়াছড়ায়ই পাওয়া গেছে। ২০১১ সালের মে মাসে শুরু হওয়া গবেষণাটি সম্পন্ন করতে প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে।’
শাহরীয়ার বলেন, মানুষের ধারণা কালনাগিনী সাপ মানেই বিষধর। কালনাগিনী আসলে এক প্রজাতির নির্বিষ সাপ। চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে সাপটি নিয়ে ভুল তথ্য প্রচারিত হওয়ায় মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু প্রজাতির সাপ বিষধর। তবে সেগুলোও একেবারে কোণঠাসা হয়ে না পড়লে সচরাচর মানুষকে ছোবল দেয় না।
গবেষণার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে শাহরীয়ার সিজার জানান, সাপ নিয়ে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাপ সম্পর্কে জানা এবং নিজেদের স্বার্থেই এগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সবাইকে সচেতন করা। দেশে কত প্রজাতির সাপ কোথায় কোথায় বিচরণ করছে, সে সম্পর্কে ধারণা তৈরি হলে সেই জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজটি করা সহজ হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যারিনামের প্রধান নির্বাহী ড. এস এম এ রশীদ বলেন, ‘সাপ নীরবে-নিভৃতে প্রকৃতির অনেক উপকার করে চলেছে। আমরা জরিপ করছি, বাংলাদেশের কোথায় কোথায় কী কী প্রজাতির সাপ আছে। তবে প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, দেশে শতাধিক প্রজাতির সাপের দেখা মেলে। আর এগুলোর মধ্যে কেউটে, গোখরা, শঙ্খিনী, শঙ্খচোর, সবুজবোড়া- এ রকম আট-দশটি প্রজাতিকে বাদ দিয়ে বাকিগুলো বিষমুক্ত।’ তিনি আরো বলেন, ‘দাঁড়াশ সাপের প্রধান খাদ্য ইঁদুর। ইঁদুর খেয়ে তারা ফসলের উপকার করছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘সাপসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী সব কিছুরই অস্তিত্ব আসলে নির্ভর করে তার প্রাকৃতিক আবাসস্থলের অবস্থার ওপর। আবাসস্থল ধ্বংস করা হলে প্রাণীগুলো অস্তিত্ব হারাবে। যেমন সবুজবোড়া বা টিয়েবোড়া প্রজাতির সবুজ রঙের সাপ কেবল লাউয়াছড়ার চিরসবুজ বনেই পাওয়া যায়। এই বন ধ্বংস করলে ওই বিশেষ প্রজাতির সাপটিও হারিয়ে যাবে। এরপর ধরা যাক অজগরের কথা। অজগর সাপ কিন্তু ছোটখাটো আকারের প্রাণী খায় না। সে মাঝারি আকারের প্রাণী যেমন বনমোরগ, মথুরা, মায়াহরিণ প্রভৃতি খায়। এখন যদি ওই বনে ওই প্রাণীগুলো না থাকে তাহলে খাদ্যাভাবে অজগরও বাঁচতে পারবে না।
http://www.kalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1188&cat_id=1&menu_id=14&news_type_id=1&index=9