মানব কল্যাণের উৎকর্ষতায় জৈব প্রযুক্তি
মাহবুব রেজওয়ান
বিজ্ঞানের অগ্রগতি আজ শুধু মানুষের জীবনেই প্রভাব ফেলছে না। সমগ্র প্রাণীকূলেই বিজ্ঞানের এই অগ্রগতি পরিলক্ষিত। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার এই অগ্রগতিতে আজ শুধু প্রানিজগতের অজানা রহস্যই উন্মোচিত হচ্ছে, তা নয়। নতুন নতুন বিস্ময় সৃষ্টিতেও বিজ্ঞান অবদান রেখে চলেছে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে প্রযুক্তি বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করছেন, তা হচ্ছে ‘ জীন প্রকৌশল ‘।
জীন প্রকৌশলের মাধ্যমে শুধুমাত্র রোগ নিরাময়, নিরোগ প্রজাতি শুধু সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নয়। এই প্রযুক্তি ব্যাবহার করে ক্লোনিং এর মাধ্যমে নতুন প্রজাতির প্রাণী উদ্ভাবনের মতো বিপ্লবও ঘটিয়ে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা।
ক্লোনিং নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় জৈব প্রযুক্তির কথা। জৈব প্রযুক্তির উদ্ভব কিন্তু আজকের ঘটনা নয়। জৈব প্রযুক্তির বিষয়টি আমাদের কাছে হাল আমলের ঘটনা মনে হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে সেই আদিকাল থেকেই। শস্য উৎপাদন থেকে শুরু করে দই,পনির,পাউরুটি,মদ এইসবই জৈব প্রযুক্তির ফসল। জৈব প্রযুক্তি বিজ্ঞানের একটি বিকাশমান শাখা। এরই ফলশ্রুতিতে জীন প্রকৌশলের মাধ্যমে বিজ্ঞান একটি নতুন স্তরে প্রবেশ করেছে। এই নতুন স্তরটি হল ক্লোনিং।
ক্লোনিং সম্পন্ন করা হয় রিকম্বিনেন্ট DNA তৈরি করার মাধ্যমে। একটি DNA অণুর কাঙ্খিত অংশ কেটে আলাদা করে অন্য একটি DNA অণুতে প্রতিস্থাপনের ফলে যে নতুন DNA অণু পাওয়া যায়, তাকে রিকম্বিনেন্ট DNA বলে। জীন প্রকৌশলের মাধ্যমে এই রিকম্বিনেন্ট DNA তৈরি করে কোন বাহকের DNA এর সহযোগিতায় কাঙ্খিত DNA এর অবিকল কপি সৃষ্টি করাকে জীন ক্লোনিং বলে।
জীন প্রকৌশলের মাধ্যমে রিকম্বিনেন্ট DNA কৌশল প্রয়োগ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থকরী ফসলকে আগাছানাশক,পতঙ্গ,ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক প্রতিরোধী করে উৎপাদন করা হচ্ছে। উদ্ভিদের জন্য বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ যেমন উষ্ণতা,শৈত্য,লবনাক্ততা প্রভৃতি মোকাবেলার জন্য সক্ষম করে তোলা হচ্ছে। জীন প্রকৌশল প্রযুক্তি ব্যাবহার করে খাদ্যগুন বাড়ানো আজ খুবই সাধারন ঘটনা।
জীন প্রকৌশলের এই প্রযুক্তি প্রানিজগতের উপরেও ব্যাবহার করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত প্রাণীকে ট্রান্সজেনিক প্রাণী বলা হয়। ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম ক্লোনিং এর মাধ্যমে প্রাণী উদ্ভাবন করার প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। তবে ক্লোনিং করা প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণীটি হল ডলি নামের একটি ভেড়া। এরপরে আরও গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আরও কিছু নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন করেছেন। যা মানুষের প্রয়োজনে ব্যাবহার করা হচ্ছে। নতুন প্রজাতির প্রাণী উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পুষ্টিগুন ও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
জীন প্রকৌশল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন মানুষের উপর গবেষণা করা যাচ্ছেন। এই গবেষণার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান জেনম প্রোজেক্ট (Human Genome Project) খুবই বিখ্যাত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের সমস্ত জীনের গঠন এবং কাজ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রকল্পটি তাদের গবেষণায় সফল করা গেলে মানুষের হাজার হাজার রোগ-ব্যাধি সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসায় একটি নতুন বিপ্লব সাধিত হবে।
মানুষের উপর শুধু জীন প্রকৌশল প্রযুক্তি নয়। বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্লোনিং এর পর বিজ্ঞানিদের দৃষ্টি এখন মানুষের উপর। এই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করা খুবই সম্ভব বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। মানব ক্লোনিং করা সম্ভব হলে আরও দ্রুত সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে অনেকে মনে করেন। তবে বিভিন্ন দেশ নানা কারণে মানব ক্লোনিং এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক