মতামত বিশ্লেষণ; জাবি ছাত্রাবাসে সাপ !!!

যুদ্ধাপরাধীদের ফাসির দাবিতে আমাদের শাবিপ্রবি’তে আলপনা আকা চলছে। তো এমন সময় সকালে একটা জুনিয়া সাপ দেখলাম রঙের হাড়ির নিচে লুকিয়ে আছে। আশেপাশের বড় ভাইয়েরা তখন মোটামুটি সাপ মারার জন্যে এক বিশাল প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছেন!!! আমি দেখে সাথে সাথে দৌড়ে দিয়ে তাদের বুঝালাম সাপটাকে না মারতে । কিন্তু তাদের এক কথা এই সাপ বিষাক্ত এবং এটি কামড় দিবে!! তো কথাবার্তার এক পর্যায়ে উনারা আশ্বস্ত হয়ে সাপটিকে যেতে দিলেন।

এ ঘটনার পর প্রায়ই ভাবতাম, এই রকম কত সাপ আমাদের ক্যাম্পাসে মাঝেমধ্যেই হয়তোবা মারা হয় যার খবর আমরা জানি না। সারা বাংলাদেশের কত ক্যাম্পাসে এইভাবে হয়ত প্রতিবছর মারা পড়ে হাজার হাজার সাপ। কেউ আমরা জানি না, কত সাপ মারা পড়ছে আমাদের মতন উচ্চশিক্ষিত তরুণদের হাতে!!

সর্বশেষ একটি ঘটনা, আমাদের মতন যারা আছেন তাদের বেশ ভালমতন একটা ধাক্কা দিয়ে গেল। আর তা হল, জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাপের উপদ্রব আর তা থেকে মুক্তির জন্যে এই সাপদের মেরে ফেলা!! পত্রপত্রিকা পড়ে জানতে পারলাম প্রায় ২৫-৩০ টি গোখরা সাপ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে মারা হয়েছে। ঘটনা সত্যাসত্য জানতে ফোন দিই জাবি’র প্রানিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন স্যারকে। তাঁর সাথে কথা বলে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেল যে হলে ১০-১৫টির বেশী সাপ মারা পড়েনি।  মূলত এই সাপগুলো কোনোটিই প্রাপ্তবয়স্ক ছিল না, সব সাপই শিশু অবস্থায় হলে চলে আসে। অবুঝ শিশুরা বুঝতে পারেনি হলে অবস্থিত শিক্ষিত ‘বড়’ ভাইয়েরা তাদের সাথে এই রকম আপ্যায়ন করবে!!king-cobra_592_600x450

আরেকটি বিষয় তখন জানতে পারলাম স্যারের মাধ্যমে যা অনেকেই হয়ত জানেন না জাবি’তে ‘ওয়াইল্ড রেস্কিউ সেন্টার’ নামে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বন্যপ্রানি’কে তাঁর সঠিক আবাসস্থলে পৌছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তারাই মূলত, হলে হলে গিয়ে এখন শিক্ষার্থীদের এই ব্যাপারে সচেতন করে তুলছেন আর সাপ দেখা মাত্র না মেরে তাদেরকে জানানোর জন্যে বলছেন। খুবই ভাল একটি উদ্যোগ।

কিন্তু এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটা প্রশ্ন উঠে আসে আর তা হল জাবি’তে হঠাট করে এখন কেন সাপের উপদ্রব? এত বছর ধরে এখানে কী কোনো সাপের উপদ্রব ছিল না? আমি দেখেছি বেশীর ভাগ মিডিয়া এই বিষয়গুলো সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছে।

সাপ নিয়ে আমরা যারা এক-আধটু পড়াশোনা করি আমরা জানি যে সাপ সাধারণত মানুষকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। যখন সাপের আবাসভূমি নষ্ট হয়ে যায় বা খাদ্য সংকট দেখা দেয় তখন সাপ তাঁর খাদ্য বা বাসস্থানের খোজ করতে করতে একটা সময় মানুষের কাছাকাছি চলে আসে। তারমানে আমরা ধরে নিতে পারি, জাবি’তে সাপের আবাসস্থল আগে থেকেই ছিল এবং তা এখন ধ্বংস করা হচ্ছে! আসলেও তাই! বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় বর্তমানে জাবি’তে এক ধরনের পরিস্কার অভিযান চলছে যার অধীনে পরিস্কার করা হচ্ছে বিভিন্ন ঝোপঝাড় । ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাপের আবাসভূমি। এখন আমাদের বাসা যদি কেউ ভেঙ্গে দেয়, স্বাভাবিকভাবেই আমরা আশ্রয় খুজবো। এখানেও তাই হয়েছে। সাপগুলো আশ্রয় খুজতে গিয়ে ঢুকে পড়ছে শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে ।আর এখন হল সাপের প্রজননের সময়। তাই স্বভাবতই ‘মা’ সাপ একসাথে যখন কয়েকটি বাচ্চা’র জন্ম দিচ্ছে তখন এই সাপগুলোই চলে যাচ্ছে হলগুলোতে। এখন প্রশ্ন হল, এই সাপ হত্যার দায় এখন কে নিবে? জাবি প্রশাসন না শিক্ষার্থীগণ? না, আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে বন্যপ্রানি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের খুবই কম পড়ানো হয়।

আমরা আশা করব জাবি প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন উদ্যোগের মাধ্যমে এভাবে সাপ মারা বন্ধ হবে এবং সাপের মতন অন্যান্য বন্যপ্রানি’র আবাসস্থল সুরক্ষিত থাকবে।

অনিমেষ ঘোষ অয়ন

সভাপতি, গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics