ভূমিকম্পের পণ্ডিত!
প্রকৃতিতে এমন কিছু প্রাণী আছে যারা ভূমিকম্প হওয়ার আগেই বুঝতে পারে। আগেভাগেই টের পেয়ে যায় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা। এরা হলো পশুপাখি, জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গ। গবেষণা করে মিলেছে এর সত্যতা। ভূমিকম্পন অনুভূতিশীল এই পণ্ডিতদের নিয়ে লিখেছেন ওবায়দুল গনি চন্দন
অনেক অনেক দিন আগে ৩৭৩ সালে গ্রিসে একবার ভূমিকম্প হওয়ার আগের দিন প্রায় সব ইঁদুর, সাপ, আর নেউলে সবাই মিলে গ্রিস ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ওরা বুঝতে পেরেছিল যে এখানে ভূমিকম্প হতে পারে। শত শত বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে যে, কোনো জায়গায় ভূমিকম্প হওয়ার আগে মাছেরা অনেক ছোটাছুটি করে। মুরগিরা ডিম পাড়ে না। মৌমাছিরা নিজের মৌচাক ছেড়ে ঝাঁক ধরে উড়ে চলে যায়। কুকুর আর বিড়াল চিৎকার করে একেবারে পাড়া মাথায় তোলে। কুকুর এবং অন্য অনেক প্রাণী আগে থেকেই অনেক কিছু বুঝতে পারে। যে কম্পন মানুষ পরে বোঝে সেটা প্রাণীরা আগে থেকেই অনুভব করতে পারে।
আসলে আমাদের পৃথিবীটা অনেক বছর আগে খুবই গরম ছিল। তারপর পৃথিবী আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হতে লাগল। আর এজন্যই আমরা এখন বাস করতে পারছি। পৃথিবীর ভেতরটা কিন্তু এখনো পুরোপুরি ঠাণ্ডা হয়নি। আর সেজন্য ভেতরের গরম উপাদানগুলো মাঝেমধ্যেই ছোটাছুটি করে। আর তখনই পৃথিবী কেঁপে ওঠে। অনুমান করা হয় প্রতি বছর প্রায় পাঁচ লাখ বার ভূমিকম্প হয়।
তবে প্রাণীদের ভূমিকম্প বোঝার ক্ষমতাকে অনেকেই উড়িয়ে দেন। তারা বলেন, প্রাণীরা তো অনেক কারণেই ভিন্ন আচরণ করতে পারে। এই যেমন ধরুন, ক্ষুধা লাগলে বা মন খারাপ হলে। কিন্তু এমন ঘটনা তো আর একবার দু’বার হয়নি। আর বেশিরভাগ সময়ই দেখা গেছে পশুপাখিদের এই ভিন্ন আচরণ কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর দিচ্ছে। একবার দেখা গেল, হেইচেং শহরে হঠাৎ ইঁদুর আর খরগোশরা ওদের গর্ত ছেড়ে আর সাপেরা তাদের শীতনিদ্রা ছেড়ে বেরিয়ে এলো। প্রাণীদের এই উদ্ভট আচরণ দেখে চীনের রাজা জারি করলেন এক উদ্ভট হুকুম। শহরের সব মানুষকে শহর খালি করে চলে যেতে হবে। শহরে দশ লাখ মানুষ বাস করে। শহরের প্রায় সবাই চলে গেল। আর হেইচেংয়ে হলো বড় মাপের ভূমিকম্প! ইঁদুর খরগোশ আর সাপেরা যদি ওই অদ্ভুত আচরণ না করত আর তা দেখে রাজা যদি সেই অদ্ভুত হুকুম না জারি করতেন তাহলে অনেক মানুষ মারা যেত।
পৃথিবী কিন্তু অনেক খণ্ডে বিভক্ত। এই খণ্ডগুলোই যখন নিজেদের মধ্যে মারামারি, মানে ধাক্কা-ধাক্কি করে, তখন একধরনের বৈদ্যুতিক আয়নের সৃষ্টি হয়। প্রাণীদের ত্বক শুকনো হওয়ার কারণে ওরা এটা ভালো বুঝতে পারে।
সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ০৪/০৫/২০১৩