বৈশ্বিক শীতলায়নঃ জলবায়ু পরিবর্তনে নতুন সতর্কবার্তা

কে.এম. ইসমাম

কোন কোন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন পৃথিবী বর্তমানে একটি শীতলায়ন অবস্থার মধ্যে রয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া চলবে এই শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তবে এই ধারণা, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রচলিত ধারণার পরিপন্থী। ডেইলি মেইল গত শনিবারের ওয়েব সংস্করণে এমন এক সময়ে এই রিপোর্টটি প্রকাশ করলো যখন জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে চলছে নানা রাজনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক বিতর্ক।এই রিপোর্ট প্রকাশ বিষয়টি নিয়ে আবারও নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করলো।

রিপোর্টটিতে বলা হচ্ছে, সুমেরুতে এ বছরের গ্রীষ্ম এসেছে গত বছরের চেয়ে কম উষ্ণতা নিয়ে। এতে দেখা যাচ্ছে, সুমেরুর প্রায় এক মিলিয়ন এলাকা বরফে আচ্ছাদিত হয়ে পরেছে যা কিনা, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশী। এটি ২০১২ সালের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র প্রকাশ করছে এবং একইসাথে এটি বিবিসির ভবিষ্যৎবাণীকে ভুল প্রমাণিত করেছে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, বার্ষিক শরৎকালীন পুনঃশীতলায়ন শুরু হওয়ার আগেই এক অখণ্ডিত বরফখণ্ড কানাডার দ্বীপপুঞ্জগুলো থেকে রাশিয়ার উত্তর উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে যার আয়তন পুরো ইউরোপের প্রায় অর্ধেক।MoS2 Template Master

বিবিসি ২০০৭ সালে এক রিপোর্টে অধ্যাপক উইলস্লাও মেস্লস্কির বরাত দিয়ে জানিয়েছিল যে, ২০১৩ সালে উত্তর মেরুর গ্রীষ্ম হবে বরফবিহীন। তিনি সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে তাঁর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে তাঁর রিপোর্টটি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত কেননা, তিনি এই পরীক্ষায় সাগরের অপধারণ ক্ষমতা এবং বরফের আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া বিবেচনায় নিয়েছিলেন। তাঁর মতে “ এটি কোন চক্র বা অনিয়মিত বা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। দিনের শেষে সব বরফই বিগলিত হবে”।

220.jpg

গবেষকদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতা ১৯৯৭ সাল থেকে থেমে রয়েছে এবং এটি বর্তমানে প্রচলিত কম্পিউটার প্রযুক্তি ও মডেলগুলোর পূর্বাভাসকে ভুল প্রমানিত করলো। ডেইলি মেইল গত মার্চেও এমন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল যেটিকে “ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরতি” বলে আখ্যায়িত করা হয়। তাঁদের এই মতবাদের সাথে বিশ্ব জুড়ে সুপরিচিত জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণা কেন্দ্রগুলোও সহমত প্রকাশ করেছে। গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা, বিশ্ব অর্থনীতি ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে।

seaIceMin_2013_v04_p30.jpg

সাম্প্রতিক রিপোর্টে সুমেরু চাদরের পুনঃআবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে যার ফলস্বরূপ জাতিসংঘের জরুরী সভা আহবান করা হলো। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল বা আইপিসিসি আসছে অক্টোবরে তাঁদের তিন ভলিউম বিশিষ্ট পঞ্চম পর্যালোচনা রিপোর্টটি প্রকাশ করার পূর্বে একটি পূর্ব পর্যালোচনা সভার ডাক দিয়েছে সুইডেনের স্টকহোমে, যা এ মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হবে। তবে ফাঁস হয়ে যাওয়া কিছু তথ্য বলছে, আইপিসিসিতে অর্থ প্রদানকারী সরকারগুলো নীতি নির্ধারণে প্রায় ১৫০০টি পরিবর্তন আনতে চায়। এখানে দুটি প্রশ্ন বিরাজমান রয়েছে, এক, কার্বন ডাইওক্সাইড নিঃসরণে পৃথিবীর তাপমাত্রা কতটা বৃদ্ধি পাবে?? দুই, গত ১৫০ বছরে পৃথিবীর সামগ্রিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ০.৮ সেলসিয়াস, এর পেছনে গ্রিন হাউস গ্যাস এবং প্রাকৃতিক পরিবর্তনশীলতা কতটুকু দায়ী। আইপিসিসি এর খসড়া রিপোর্ট বলছে, তারা ৯৫% আত্মবিশ্বাসী যে, প্রায় ৯০% বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২০০৭ থেকে মনুষ্যসৃষ্ট। কিন্তু তাঁদের এই দাবি ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিজ্ঞানী জুডিথ ক্যারির মতে, “ অনিশ্চয়তা রয়েছে এবং প্রচলিত কম্পিউটার ভিত্তিক মডেলগুলো প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে পারবেনা। সেহেতু, আইপিপিসি এর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সুযোগ কম” উইনকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনাসতাসইস সেরিস, যিনি প্রথমবারের মত সমুদ্রের চাক্রিক বিভিন্ন প্রক্রিয়ার বর্ণনা দেন,তার মতে “ আমরা ইতোমধ্যে শীতলায়তনের মধ্যে চলে গিয়েছি এবং এটি নুন্যতম ১৫ বছর ধরে চলবে। ১৯৮০-১৯৯০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন থেমে গিয়েছে, তবে আইপিসিসি বলছে ১৫ বছরের বিরতি স্বাভাবিক তবে, তাঁরা যদি এই ধারণায় স্থির থাকে তবে ২-৩ বছরের মধ্যে তাঁদের ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হবে” ।

তবে, কোন কোন বিশেষজ্ঞ আবার কিছুটা সাবধানী বক্তব্য ঝেড়েছেন, রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এড হকিংস এর মতে “ কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা বৈশ্বিক উষ্ণায়নে প্রভাব রাখলেও গত ১৫০ বছরে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক পরিবর্তনশীলতা বৈশ্বিক উষ্ণায়নে দায়ী নয়” তবে আই পি সি সি এখনো বলছে, উত্তরমেরুর বরফ এখনো হুমকির সম্মুখীন।

তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিহাস বলে অন্যকিছু, ১৯২০-১৯৩০ এর মধ্যে উত্তর মেরুর বরফ ব্যাপক হারে বিগলিত হয় কিন্তু পরবর্তীতে পুনঃশীতলায়নের ফলে সেই বরফ আবার ফিরে আসে। আবং ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এই শীতলায়ন চলে। আবার আইপিসিসি এর ভাষ্যমতে, ১৯৭৯ সাল থেকেই বরফ বিগলন শুরু হয়। অধ্যাপক ক্যারির মতে আগামী পাঁচ বছরে বরফ গলনের প্রকৃতি ও আচরণ বহুলাংশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং বৈশ্বিক নীতি নির্ধারণে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সূত্রঃ ডেইলি মেইল।

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics