বৈশ্বিক বিপর্যয় : কিরিবাতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
দেবাশীষ মজুমদার
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কিরিবাতি । বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে সৃষ্ট, সমুদ্রের পানি বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে সাগরের বুকে বিলীন হতে যাচ্ছে এই দ্বীপদেশটি ।ধারনা করা হচ্ছে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই সমুদ্র স্রোত কিরিবাতি দ্বীপের সবচেয়ে উঁচু অংশ ছুঁয়ে যাবে। কিরিবাতি কেন্দ্রীয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জ , যার স্থায়ী জনসংখ্যা ১০০,০০০(২০১১) এবং আয়তন ৮০০ বর্গ কিলোমিটার । দ্বীপদেশটি ১৯৭৯ সালের ১২ই জুলাই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায় । কিরিবাতি অধিকাংশ দেশের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখে এবং তার প্যাসিফিক প্রতিবেশী, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে প্রচুর বৈদেশিক সাহায্য পায়। কিরিবাতির ফোনিক্স দ্বীপের আগুনরাঙা সূর্যাস্ত একে এক পৌরাণিক ভাবমূর্তির প্রতিরূপ হিসেবে পৃথিবীজুড়েই পরিচিত করেছে। তাই রাজনৈতিক দিক থেকে শুরু করে , কৃষি , মাছ চাষ , প্রাকৃতিক সৌন্দর্য , শিক্ষা ব্যবস্থা কোন দিক থেকেই কমতি নেই দেশটির ।
কিন্তু ভাবতেই অবাক লাগে, এই দেশটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হতে যাচ্ছে । পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরতরে মুছে যাবে এই দেশ এবং জাতি । পৃথিবী উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের জল বেড়েছে বেশ কয়েক মিটার ।কিরিবাতি দ্বীপটি সমু্দ্রপৃষ্ঠ থেকে খুব একটা উঁচু নয়, নোনা জল ঢুকে চাষযোগ্য জমি ডুবিয়েছে, মিঠা জলের ভাণ্ডারও সর্বত্র সুরক্ষিত নেই, টান ধরেছে । আর এর পরিণতির কথা ভেবে ভয় পাচ্ছেন দ্বীপবাসীরা, যে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো মানচিত্র থেকেই মুছে যাবেন তাঁরা । কিরিবাতি মৎস্য সম্পদে ভরপুর, তবে বর্তমানে তাঁদের নিজের ভূখণ্ড রক্ষা করার কোন উপায় নেই ।
দেশটির রাষ্ট্রপতি ৬,০০০ একর যায়গা কিনেছেন ফিজি সরকারের কাছ থেকে, কিন্তু এতো বিশাল জনসংখ্যার স্থান সংকুলান করতে এ পরিমাণ এলাকা পর্যাপ্ত নয় ফলে আরও জায়গা কেনা প্রয়োজন। কিরিবাতি তাদের জনগণকে প্রশিক্ষণ ও চাকরি দিতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আবেদন জানিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাসি ইরিয়া লাম্বুন জানান কিরিবাতি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উল্লেখ্য, দেশটির দ্বীপগুলো গড়ে সমুদ্র পৃষ্ঠের মাত্র দুই মিটার উপরে রয়েছে। তিনি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ইতিমধ্যে চালু করা একটি কর্মসূচি সমপ্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছেন। সেখানে কিরিবাতি থেকে আসা লোকদেরকে নার্স হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এবং তাদের কর্মসংস্থান ও নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।উল্লেখ্য, কিরিবাতির বিস্তৃত ভূখন্ড থাকা সত্ত্বেও তাদের মোট জনসংখ্যা মাত্র এক লাখ। শুধু কিরিবাতি নয়, পৃথিবীর অনেক দেশ বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে পড়বে এবং একসময় সমুদ্র গর্ভে হারিয়ে যাবে ।এওএসআইএস এর সভাপতি গ্রেনাডার ডেসিমা উইলিয়ামস বলেন, আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দিনদিন বাড়ছে৷ এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে দ্বীপরাষ্ট্র গুলো । ২০৫০ সালের দিকে আমাদের বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলও কিরিবাতির মত সমুদ্রে হারিয়ে যাবে বলেই মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিরিবাতির মাত্র ১ লক্ষ জনগণ নিয়ে সেখানকার সরকার আজ বিপদে । কিন্তু আমাদের তো কয়েক কোটি মানুষ! এতো জনগণ নিয়ে আমাদের সরকার কোথায় যাবে সে সময়! কিংবা কোন দেশ আমাদের জায়গা দিবে? বর্তমানে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে না ভাবলেও এক সময় এটি কোটি টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে।