বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কি মরুকরণে এককভাবে দায়ী ???
আরিফুর রহমান মিনার
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলেই মাটির উর্বরতা হ্রাস ও পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে অপেক্ষাকৃত শুকনো ভূমিগুলোতে । সাম্প্রতিক সময়ে ভূমি বিষয়ক গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা এমনই ভবিষৎবাণী করেছেন । বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে শুষ্কতা বৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে বিশ্বের শুষ্কভূমি বিশেষ করে মরু অঞ্চলগুলোতে মাটির পুষ্টির ভারসাম্য এবং উৎপাদন ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট করবে, এর ফলে এসব অঞ্চলে বসবাসরত লাখ লাখ মানুষের খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য চাহিদা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
গবেষণাটি বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। তাঁরা শুধুমাত্র এন্টার্কটিকা মহাদেশ ছাড়া বিশ্বের প্রায় ১৬ টি দেশের ২২৪ টি শুষ্কভূমিতে এই গবেষণা চালান ।
পরিবেশ ও প্রাণী বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড এলড্রিজ যিনি আন্তর্জাতিক গবেষণা দলেরও একজন সদস্য, তাঁর তত্তাবধানে অস্ট্রেলিয়ার মিল্ডূরার কাছাকাছি বনভূমিতে এই গবেষণা চালানো হয়। অন্যান্য যেসকল জায়গা এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে রয়েছে – ইসরাইলের নাগেভ মরুভূমি, আর্জেন্টিনা এবং পেরুর অল্টিপ্লানো পার্বত্য অঞ্চল। এসব এলাকায় বৃষ্টিপাত প্রতি বছর ১০০ থেকে ৮০০মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসকল অঞ্চল থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে স্পেন এ পাঠানো হয় এবং একই গবেষণাগারে সমস্ত মাটির নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণাপ্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, সংগ্রহকৃত মাটির নমুনায় কার্বন ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ হ্রাস ও ফসফরাসের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে মাটিতে অত্যাধিক শুষ্কতা বৃদ্ধি পেয়েছে ।এই ফলাফল গত মাসে ‘নেচার সাময়িকী’তেও প্রকাশিত হয়।
অধ্যাপক এলড্রিজ বলছেন- “পৃথিবীর ভূমিগুলোর প্রায় ৪১ শতাংশে রয়েছে শুষ্ক অঞ্চল তথা মরুভূমিতে এবং বিশ্বের জনসংখ্যার শতকরা ৩৮ শতাংশেরও বেশি জনগোষ্ঠীর বসবাস এরকম শুষ্কভূমিতে। ক্রমবর্ধমান এই জনগোষ্ঠী ক্রমান্বয়ে খাদ্য, কাঠ এবং জ্বালানি উৎপাদনের জন্য প্রান্তিক জমি বিশেষ করে শুষ্কভূমিগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। কিন্তু এই বাস্তুতন্ত্র গুরুতরভাবে কার্বন , নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস চক্রের ভারসাম্যহীনতা দ্বারা প্রভাবিত হবে।”
২০৮০-২০৯৯ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৫-১৫ শতাংশ মাটির আর্দ্রতা হ্রাস পাবে। এমনই ভবিষ্যৎবানী করেছেন বিজ্ঞানীরা।
পাথর এবং বর্জ্যের বিয়োজনের মাধ্যমে ফসফরাস মাটিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এই মাত্রা আরো বেড়ে যাবে যদি মাটিক্ষয় এবং মাটির শুষ্কতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
ফসফরাসের এই বৃদ্ধির ফলে মাটিতে কার্বন ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। এর ফলে মাটিতে সংঘটিত জৈবিক প্রক্রিয়াসমূহ যেমন – পচন , সালোকসংশ্লেষন এবং নাইট্রোজেন নিবন্ধিকরন ব্যাহত হবে। পরিশেষে গাছপালার স্বল্পতা এই শুষ্ককরণ প্রক্রিয়াকে আরো তরান্বিত করবে।
পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এলড্রিজ আরও বলেছেন. ” উদ্ভিদের জন্য সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে এই উপাদানেগুলো অপরিহার্য, কিন্তু ক্রমবর্ধমান মরুকরণ মৃত্তিকা চক্রে একটি গন্ডগোল পাকিয়ে এর ভারসাম্য বিপর্যস্ত করবে।”
সূত্রঃ সায়েন্স ডেইলি