বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শকুন

turkey-vulture-sc5xeyআজিজুর রহমান

দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শকুন নামের বাংলাদেশের অতি চেনা বিশালাকার এ পাখি। প্রচলিত ভাষায় এদের ঝাড়দুরে বা স্ক্যাভেঞ্জার অর্থাৎ ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারক পাখি বলা হয়। বিভিন্ন প্রাণীর মৃতদেহ শকুনরা দল বেঁধে মুহূর্তেই খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। ফলে পচন ধরা গলিত মৃতদেহগুলো থেকে সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে না। লোকালয় আবর্জনা, দূষণ ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখে। নিঃসন্দেহে এরা মানবসমাজের জন্য উপকারী পাখি। এক সময় শকুনরা খাদ্যের সন্ধান পেলে দল বেঁধে ছুটে যেত দূর-দূরান্তে। এক লোকালয় থেকে অন্য লোকালয় বহুদূরে। এদের প্রবল ডানা ঝাপটা আর সমস্বর বিকট শব্দে লোকজন বুঝতে পারে শকুন এসেছে। কিন্তু এখন আর সেই চিরচেনা শকুনের দেখা পাওয়া যায় না। ৪ দশক থেকে শকুন পাখিটি বিরল প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবী থেকে শকুন বিলুপ্ত হতে চলেছে। গত ৩ দশকে উপমহাদেশের ৭৫ শতাংশ শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ’৮০-এর দশকে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে প্রায় ৪ কোটি শকুনের অস্তিত্ব ছিল। এ সংখ্যা কমে এখন ৪০ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। শকুনের এ ক্রমবিলুপ্তি পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশে বেশ কয়েক প্রজাতির শকুনের অস্বিত্ব ছিল। ইতোমধ্যে বাংলা শকুন ও রাজ শকুন এতটাই বিপন্ন প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে যে, এখন এদের আর দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। এর পরও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এখনো এ দেশে আরো ৫ প্রজাতির শকুন কোনোমতে টিকে আছে। এগুলো হচ্ছে : গ্রিফেন, হিমালয়ী, সরু ঠোঁট, কালো ও ধলা শকুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে পশু চিকিৎসার ব্যথানাশক ডাইক্লোফেন নামের ওষুধ ব্যবহার। ভারতে প্রতি বছর ৩০ শতাংশ শকুন মারা যাওয়ার কারণও ডাইক্লোফেন। বাংলাদেশে পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেন ব্যবহার অতি সম্প্রতি নিষিদ্ধ হলেও অতিবিপন্ন এই পাখিটি রক্ষায় বেশ কয়েক বছর আগে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে এ ওষুধটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব ভেটেরিনারি মেডিসিনের গবেষক ড. লিন্ডসে এক গবেষণায় প্রমাণ করেন পশু চিকিৎসালয় ডাইক্লোফেনের ব্যবহার শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। ডাইক্লোফেন দেয়া হয়েছে এমন মৃত্যু পশুর মাংস খেলে শকুনের কিডনি নষ্ট হয়ে ২-৩ দিনের মধ্যেই শকুনের মৃত্যু ঘটে। এ ছাড়া বনাঞ্চল ধ্বংস, খাদ্যের অভাব এবং ক্রমেই বেড়ে  চলা নানাবিধ দূূষণের কারণেও শকুনের এ করুণ পরিণতি। জনসচেতনতা বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো যেখানে সেখানে মৃত পশু ফেলে না দিয়ে সেগুলো মাটি চাপা দিয়ে রাখা হচ্ছে। ফলে মৃত পশু খাদক শকুনের খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মহীরুহ বলে পরিচিত বট, অশ্বত্থ, পাকুড়, তাল ইত্যাদি বিশালাকার গাছে লোকচক্ষুর আড়ালে সাধারণত শকুন বাসা বাঁধতে পছন্দ করে। জনসংখ্যা, বন উজাড় ও বৃক্ষনিধনের ফলে এদের আবাসস্থলের স্থায়ী সংকট দেখা দিয়েছে। মূলত এসব কারণেই শকুন পাখিটি চিরতরে হারিয়ে যেতে বসেছে।

সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ ২৭/০৬/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics