বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ
বৈচিত্র্যময় জলজ পরিবেশ আর জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বাংলাদেশের জলাশয়গুলো এক সময় ছিল অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির মাছের ভাণ্ডার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রজাতির বৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলার মাছ সম্পদ ছিল অনন্য। আমাদের অবিমৃশ্যকারিতার জন্য সেই প্রাচুর্যময় অবারিত মাছের ভাণ্ডার আজ নিঃশেষ প্রায়। ‘ফিশারিজ : বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট কেসিং দ্য লাস্ট সেনচ্যুরি’ শীর্ষক গবেষণাগ্রন্থে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশে যত প্রজাতির মিঠাপানির মাছে আছে তার অর্ধেক পরিমাণ কমে গেছে। বর্তমানে প্রতি বছর ৯ শতাংশ হারে মিঠাপানির মাছ কমে যাচ্ছে। কমার এই হার যদি অব্যাহত থাকে, তবে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে মুক্ত জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১২০ প্রজাতির দেশীয় মাছ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে বর্তমানে ২৯৬ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে মুক্ত জলাশয়ে রয়েছে ২৬০ প্রজাতি। ২৪ প্রজাতির চিংড়ি এবং ১২ প্রজাতির বিদেশি মাছ। মোহনা ও সমুদ্রে রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ এবং ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি। মোট ৫১১ প্রজাতির মাছ। আইইউসিএন কর্তৃক প্রকাশিত Red book of threatened Fishes of Bangladesh শীর্ষক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট ৫৪ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ১২ প্রজাতি মাছের অস্তিত্ব মহাবিপন্নের তালিকায়; ২৮ প্রজাতি বিপন্ন তালিকায় আর ১৪ প্রজাতির অবস্থা সংকটাপন্ন। মহাবিপন্ন মাছের তালিকায় ভাঙ্গনা, নান্দিনা, ঘোড়ামাছ; সরপুঁটি, মহাশোল, রিঠা, ঘাউরা, বাচা, পাঙ্গাশ, চেনুয়া, বাঘাইর ও তিলাশোল রয়েছে। বিপন্ন তালিকায় রয়েছে চিতল, কুকশা, খোকশা, কালাবাটা, ভাঙ্গনবাটা, কালিবাউশ, ঘইন্না, ঢেলা, বোল, রানী, দারকিনা, বেটি, আইড়, গুইজ্জা আইড়, টেংরা, পাবদা, কানিপাবদা, মধুপাবদা, চেগা, একঠোঁটা, কোটা, কুমিরের খি, বানদি কৈ, নেফটানি, গজার, টাটকিনি, গাং পাবদা ও রয়না মাছ। আর সংকটাপন্ন তালিকায় রয়েছে ফলি, বাওবাইন, কাশখয়রা, তিতপুঁটি, গোলশা টেংরা, কাজলি, গাংমাগুর, কুচা, চান্দা, লালাচান্দা, বিষতারা, তেলটাকি, তারাবাইন ও শালবাইন। প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র এবং খাদ্যের উৎসস্থল ক্রমাগত সংকোচিত, দূষিত হয়ে পড়া, সেই সঙ্গে দেশের অধিকাংশ জলাশয় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় মাছের জীবন ধারণ ও বংশ বিস্তার ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হচ্ছে পোনা, ডিমওয়ালা মাছসহ নির্বিচারে মাছ নিধন এবং মানুষের প্রকৃতিবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড। এসব কারণেই দেশীয় মাছের প্রজাতি বৈচিত্র্য বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে এসব মাছ তথা জলজ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ খুবই জরুরি।
আজিজুর রহমান
স্যত্র; দৈনিক মানবকণ্ঠ ০৬/০৬/২০১৩