বিলুপ্তির পথে বাঘ; একটি ডয়েচে ভেলে প্রতিবেদন
নাটকীয় হারে কমছে
২৯শে জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস৷ মূলত বিশ্বের অন্যতম রাজকীয় এই প্রাণীটি রক্ষায় উদযাপন করা হচ্ছে এই দিবস৷ গত শতকে গোটা বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখ৷ আর বর্তমানে জঙ্গলে বাঘের এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩,২০০তে৷ এভাবে কমতে থাকলে আগামী দশ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে বাঘ৷
পৌরাণিক কাহিনিতে বাঘ
মানুষের কাছে অন্যতম সম্মানিত প্রাণী হিসেবে বাঘের কথা বিভিন্ন সংস্কৃতির পুরাণে রয়েছে৷ চীনের রাশিচক্রে উল্লিখিত ১২টি প্রাণীর একটি বাঘ৷ এই প্রাণীকে বনের রক্ষক এবং ক্ষমতা, শক্তি ও সৌন্দর্য্যের প্রতীক মনে করা হয়৷ চীনে পরবর্তী বাঘের বছর ২০২২ সাল৷
উপপ্রজাতিগুলোও হুমকির মুখে
উনিশ শতক অবধি বাঘের নয়টি উপপ্রজাতির দেখা মিলেছিল গোটা বিশ্বে৷ বর্তমানে, ইন্দো-চায়না, মালয়, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং আমুর বাঘ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে৷ আর সুমাত্রান এবং দক্ষিণ চীনের বাঘের অবস্থা আরো সঙ্গিন৷ বালি দ্বীপ, জাভা এবং কাস্পিয়ান অঞ্চলের বাঘ গত ৮০ বছরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ বাঘের বিভিন্ন উপপ্রজাতির মধ্যে আকার, রং এবং লোমের আচ্ছাদনে পার্থক্য রয়েছে৷
আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে
ঐতিহাসিকভাবে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, তুরস্ক, রাশিয়ার পূর্ব উপকূল, চীন এবং সার্বিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে বাঘের আবাসভূমি৷ কিন্তু বর্তমানে বাঘের আবাসের ৯৭ শতাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে৷ মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড – যেমন বাসস্থান সম্প্রসারণ, চাষাবাদ এবং রাস্তা নির্মাণের মতো কারণে বাঘের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে৷ থাকার জায়গার সংকটের কারণে সহজেই শিকারিদের ফাঁদে ধরা পড়ছে বাঘ৷
অবৈধ বাণিজ্য
গত এক হাজারেরও বেশি সময় ধরে চীন এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রথাগত ঔষধ তৈরিতে বাঘের শরীরের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে৷ মূলত বাত এবং চর্ম রোগেই চিকিৎসায় এসব ব্যবহার করা হয়৷ ১৯৮৭ সাল থেকে অবশ্য বাঘের দেহের বিভিন্ন অংশ বিক্রি আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ৷ তবে এখনো কালোবাজারে বাঘের চাহিদা অনেক৷
খামারে বাঘ
জঙ্গলে খুব অল্প কিছু বাঘ টিকে থাকলেও বিভিন্ন খামার এবং চীন ও এশিয়ার বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় বর্তমানে বন্দি আছে পাঁচ হাজারের মতো বাঘ৷ পরিবেশ বিষয়ক অনুসন্ধানী এজেন্সি গত ফেব্রুয়ারি মাসে জানিয়েছে, খামারে পালন করা বাঘের চামড়া এবং হাড় ব্যবহার করে বিলাসী আসবাব এবং ওয়াইন তৈরি করা হয়৷ এ কারণে জঙ্গলে মুক্ত পরিবেশে থাকা বাঘও শিকার করা হচ্ছে৷
বিনোদনে বাঘ
সেই সতেরো শতক থেকে সার্কাসে ব্যবহার হচ্ছে বাঘ৷ প্রাণিবাদিরা সার্কাসে বাঘের এ ধরনের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন৷ বিশেষ করে বাঘকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পদ্ধতি, ক্রমাগত ভ্রমণ এবং অপ্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা৷ ব্রিটিশ সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে সার্কাসে বনের প্রাণী ব্যবহারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে৷
মানুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
ভূমি দখল নিয়ে বাঘ এবং মানুষের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে জঙ্গলের বাঘ আরো হুমকির মুখে পড়ছে৷ জঙ্গলের পরিধি কমায় খাদ্যের সন্ধানে বাঘ লোকালয়ে হাজির হচ্ছে, হামলা চালাচ্ছে বিভিন্ন গবাদি পশুর উপর৷ ছবিতে একটি বাঘিনীর মরদেহ পরীক্ষা করছেন ভারতের বন কর্মকর্তারা৷
সংরক্ষণের প্রচেষ্টা
২০১০ সালের নভেম্বরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে বাঘ আছে বাংলাদেশ সহ এমন ১৩টি দেশ ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে৷ এজন্য বাঘ শিকার বন্ধ এবং বাঘের আবাসস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ ছবিতে শুল্ক বিভাগের হাতে আটক বাঘের চামড়া দেখানো হচ্ছে৷
চিড়িয়াখানায় অথবা জঙ্গলে, নাকি দু’টোতেই?
এমনকি স্বনামধন্য চিড়িয়াখানাতেও বাঘের প্রজনন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে৷ এক্ষেত্রে চিড়িয়াখানাগুলোর মন্তব্য হচ্ছে, তারা গবেষণা এবং জীনগতভাবে বৈচিত্র্যময় বাঘের বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে৷ তবে ‘‘বর্ন ফ্রি’’ এর মতো সংগঠনগুলো চায়, বাঘ রক্ষায় জঙ্গলেই আরো উদ্যোগ নেওয়া হোক৷
প্রতিবেদন: সামান্থা আর্লি / এআই | সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন
সূত্রঃ http://www.dw.de/বিষয়/বিজ্ঞান-পরিবেশ/