বিদায়ের ঘণ্টা বাজাচ্ছে কালো লেজ জৌরালি

আলম শাইন
বেশ ক’বছর আগে মেঘনায় নৌবিহারে গিয়েছি সহকর্মীদের সঙ্গে। গন্তব্যের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। উত্তাল মেঘনার বুকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঘুরে বেড়ানোই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সবার। আমার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন, জলজ পাখিদের কিছু ছবি-টবি তোলা। অবসরে ছবিগুলো দেখে স্মৃতি রোমন্থনের সুযোগ হয় তাতে। যেখানেই বেড়াতে যাই না কেন সঙ্গে বাইনোকুলার এবং ক্যামেরা নিতে ভুল করি না। নোটখাতাটাও সঙ্গে রাখি অবশ্য। শুধু পাখিই নয় প্রকৃতির যাবতীয় দৃষ্টিনন্দন বিষয়গুলো টুকে নেই এবং ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করি। এ অভ্যাসটা আমার দীর্ঘদিনের। মেঘনায় নৌবিহারের মুহূর্তেও এসব সঙ্গে রেখেছি। ফলে সুযোগ হয়েছে কিছু দুর্লভ ছবি তোলার। আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে পরিযায়ী পাখি। এ পাখি প্রথম দর্শন ঘটে মেঘনায় নৌবিহারকালে। নদীর কিনারে কাদামিশ্রিত এলাকায় শিকার খুঁজছে অনেক পাখি দলবদ্ধ হয়ে। কেউ পায়চারি করছে আপন মনে, কেউ গলা উঁচিয়ে দেখছে আগন্তুকদের হাবভাব। এসবই কিন্তু দেখা হচ্ছে দূর থেকে বাইনোকুলারে চোখ রেখে। স্বল্প সময়ের পর্যবেক্ষণেই ওদের জাত নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছি। পূর্বের ধারণাটা কাজে লাগিয়েছি সেই দিন, ফলে সহজ হয়ে গেছে এদের পরিচিতি লাভ। এ পাখি একটা সময়ে প্রচুর দেখা যেত আমাদের দেশে। খুব বেশি এখন আর নজরে পড়ছে না। স্বভাবে পরিযায়ী এরা। উত্তর-পূর্ব এশিয়া থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের দেশে চলে আসে। আশ্রয় নেয় জোয়ার-ভাটা হয় এমন নদ-নদীর কিনারে। বিচরণ করে ছোট কিংবা বড় দলেও। শিকারের জন্য বেছে নেয় কাদামাটি এলাকা এবং বালুকারাশিতে খুঁজে বেড়ায় ভূমিজ কীট। পাখির বাংলা নাম : ‘কালো লেজ জৌরালি’, ইংরেজি নাম : ‘ব্লাক টেইল্ড গডউইট’ (Black Tailed Godwit), বৈজ্ঞানিক নাম : ‘লিমোসা লিমোসা’ (Limosa Limosa), গোত্রের নাম : ‘স্কোলোপাসিদি’।
লম্বায় পুরুষ পাখি ৪১ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ৫০ সেন্টিমিটার (১০ সেন্টিমিটার লম্বা ঠোঁটসহ) ঠোঁটের গোড়া লালচে, ডগা কালচে। মাথা, ঘাড়, বুক লালচে-বাদামি। পিঠ কালচে-বাদামি ফোঁটাযুক্ত। ডানার ওপরে রয়েছে সাদা মোটা ডোরা যা উড়লে নজরে পড়ে। ডানার নিচের অংশ বেশিরভাগই সাদা। বুকের কাছ থেকে লেজের নিচ পর্যন্ত সাদা। লেজ খাটো, কালো। পা লম্বা, ধূসর-সবুজাভ। চোখের বলয় হলদেটে। ভ্রƒ সাদাটে। প্রজননের সময় রঙ বদলায়। এই সময় মাথা থেকে বুক লালচে এবং পেটের সাদা অংশ কালচে দেখায়। কালো লেজ জৌরালির প্রধান খাবার জলজ পোকামাকড়। এ ছাড়াও জলজ উদ্ভিদের বীজ এবং ভূমিজ কীটও খায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নিজ বাসভূমিতে ফিরে বাসা বাঁধে। মাটির খোড়লে ৩-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটতে সময় লাগে ২২-২৪ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২৫-৩০ দিনের মধ্যে।

লেখক : কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী গবেষক ও পরিবেশবাদী লেখক।

alamshine@gmail.com

সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ২৩/০৫/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics