বালির বস্তা থেকে ব্যাগ তৈরি
বস্তা আর কাপড়ের টুকরোগুলো পড়েই ছিল
জুন মাসের প্রথমদিকে জার্মানির প্রায় সব এলাকাই বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল৷ ঐতিহাসিক পুরনো শহর ড্রেসডেনকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে হাজার হাজার বালির বস্তা জড়ো করা হয়৷ আর এই কাজে যাঁরা স্বেচ্ছায় সাহায্য করেছেন, তাঁদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীরাও ছিল৷ বস্তা টানাটানির সময়ই ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় পুরনো বস্তা কেটে নতুন ব্যাগ তৈরির ভাবনাটা এসেছে৷
স্বেচ্ছাকর্মীদের উদ্যোগ
ইয়োহানা মাত্র কয়েকদিন যাবত ‘চটের ব্যাগ’ তৈরির উদ্যোগের সাথে জড়িত হয়েছে৷ ড্রেসডেন শহরের ‘নয়স্টাট’ এলাকায় ওদের দোকান৷ সাতজন উদ্যোগীর পছন্দে যার নাম হয়েছে ‘চটের ব্যাগ’৷ বালির বস্তার ভেতের কাপড় ঢুকিয়ে আর বেল্ট লাগিয়ে মোটামুটি আধা ঘণ্টার মধ্যেই ইয়োহানার একটি ব্যাগ সেলাই করে ফেলতে পারে৷
-
উদ্যোগী মিশা এবং বেন
চটের ব্যাগ তৈরির মূল উদ্যোক্তা মিশা এবং বেন৷ ‘এলবে’ নদী যখন বন্যায় প্লাবিত তখনই বেন-এর মাথায় এই চিন্তাটা এসেছে৷ বেন বলেন, ‘‘বন্যার কাজে সাহায্য করে দিনের শেষে যখন আমরা বিয়ার হাতে নিয়ে বসেছিলাম আর ভাবছিলাম, কি করে আমরা আরো সাহায্য করতে পারি, তখনই আইডিয়াটা এসেছে এবং তার দুই সপ্তাহ পরেই কাজ শুরু করি৷’’
সীমিত উপাদান
মিশা গত কয়েকদিন থেকে সেলাই মেশিনে কাজ করতে করতে একেবারে ঘেমে উঠেছেন৷ অথচ ইনি গত এক সপ্তাহ আগেও সেলাই সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না৷ কিন্তু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাচ্ছে৷ ছাত্র-ছাত্রীদের লক্ষ্য খুব বেশি হলে ৮৭৬টি ব্যাগ তৈরি করার৷ আর এরই মধ্যে ১০০টা ব্যাগ বিক্রিও হয়ে গেছে৷
পড়াশোনায় চেয়ে ব্যাগ তৈরিতেই বেশি মনোযোগ
ব্যাগ বিক্রি করা, বিক্রেতাকে পরামর্শ দেয়া, সেই সাথে দোকানের সবদিকে লক্ষ্য রাখা – একেবারে সহজ কাজ নয়৷ এরপরও বেন কিন্তু তাইই করছেন৷ বিক্রেতাদের ভিড়ে দোকানের দরজা প্রায় সবসময়ই খোলা৷ তাছাড়া ফেসবুকেও নানা প্রশ্ন এসে জমা হচ্ছে৷ গত কয়েকদিন এ সবের কারণে তেমন ঘুমোতেও পারেননি বেন৷ ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করলেও বর্তমানে বেনের সমস্ত চিন্তা-ভাবনায় শুধুই ‘‘চটের ব্যাগ’’৷
প্রতীকী মূল্য
বারবারার মতো অনেক ব্যাগ ক্রেতা আছেন যাঁরা বন্যার সময় নিজেরা সাহায্য করেছেন এবং সেরকম অনেক মানুষকেই চেনেন৷ একটি ব্যাগের আসল মূল্য ৮,৭৬ ইউরো, তবে অনেকেই তার চেয়ে বেশি দাম দিয়েছেন ব্যাগের জন্য৷ এমনও মানুষ আছেন যাঁরা ২৫০ কিলোমিটার পথ গাড়িতে এসেছেন সীমিত সংখ্যক ব্যাগ থেকে একটি কেনার জন্য৷
ছেড়া বস্তা
যে বালির বস্তাগুলো ড্রেসডেনবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছে, সেগুলো ময়লা, তৈলাক্ত পানিতে থাকার ফলে ছিড়ে বা নষ্ট হয়ে গেছে৷ তবে যে বস্তাগুলো সরাসরি পানিতে ছিল না, সেগুলোই ভালো করে ধুয়ে, বালি ছাড়িয়ে তারপর ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে৷
বস্তা, কাপড় এবং বেল্ট – সবই দান
ব্যাগ তৈরির জন্য যেসব উপাদান প্রয়োজন সবকিছুই দান হিসেবে পাওয়া গেছে৷ ‘‘দোকানে এসে কেউ টুকরো কাপড় দিয়েছেন আবার কেউ বা সেলাইয়ে সাহায্য করতে চেয়েছেন৷ প্রথম কয়েকটি ব্যাগ কিনেছেন একটি পানশালার মালিক, যিনি বন্যার সময়ও আমাদের সাহায্য করেছেন, বললেন মিশা এবং বেন ৷’’
সেলাই মেশিন এখন বন্ধ
এই মুহূর্তে বেল্ট না থাকায় সেলাই বন্ধ৷ কোনো একসময় যখন ৮৭৬টি ব্যাগ বিক্রি হবে তখন সংস্কৃতিক ও সামাজিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে অর্থ তোলা হবে তারপর ‘‘চটের ব্যাগ’’ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে৷
প্রতিবেদন: রনি আরনল্ড / এনএস | সম্পাদনা: দেবারতি গুহ