লাওয়াছড়ার গহীনে; বাঁচবে বর্মী অজগর

 সুপ্রিয়া সরকার

বর্মী অজগর বা (Python molurus bivittatus) এক অত্যাশ্চর্য সাপ। এটি সর্ববৃহৎ সাপেদের মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃত বনাঞ্চল জুড়ে এদের বসবাস। এটি জনসাধারণের কাছে অতি পরিচিত এবং শখের বশেও এই সাপ পোষা হয়। ফ্লোরিডায় এর পরিচিতি রয়েছে এর আক্রমণাত্মক কৌশলের জন্য। একারণে, এই সাপ নিয়ে সকল গবেষণা হয়েছে ফ্লোরিডার বুনো পরিবেশে বা কাঁচের ভিতর। এই সাপের মূল্য অন্য সাপের থেকে ঢের বেশী কারণ, এই সাপের অস্তিত্ব জঙ্গলে প্রায় নেই; এতে করে একটি ধারণা পাওয়া যায় যে এর সংখ্যা খুব তাড়াতাড়ি কমে গেছে। বাংলাদেশ ও ভারতে এই প্রজাতি বিপন্ন, ভিয়েতনাম ও চীনে সংকটাপন্ন; আইইউসিএন একে অসুরক্ষিত হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এর সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে আইইউসিএন সংরক্ষণ গাইডের এর ১ম পরিশিষ্টে।burmese puthon এই প্রজাতির চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলেও এর সংরক্ষণের জন্য কিছু করা হয়নি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর শারীরিক কার্যাবলী, শিকারের উপায়, বাসস্থান, প্রজনন ইত্যাদি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা নেই। অতীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই সাপ পাওয়া যেত কিন্তু এখন কিছু কিছু জায়গায় অতি অল্প সংখ্যক সাপ পাওয়া যায়। বার্মিজ অজগর উচ্চ পর্যায়ের শিকারি এবং বাস্তুসংস্থানের জন্য অত্যন্ত প্রভাববিস্তারকারী একটি প্রাণী। এই প্রজাতির সাথে আরও অনেক প্রজাতির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক আছে। সুতরাং বাস্তুসংস্থান রক্ষার জন্য এই প্রাণীকে রক্ষা করা জরুরি।

কিছু দিন আগে এই প্রাণী সংরক্ষণের জন্য একটি চমৎকার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা নামের একটি বার্মিজ অজগরের মধ্যে ছোট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি প্রেরকযন্ত্র বসানো হয়েছে। বাংলাদেশের বনসম্পদ বিভাগ ও কারিনাম নামের একটি বনপ্রাণী গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ পদক্ষেপ নেয়।  বনপ্রাণী গবেষক স্কট ট্রেগেসার, বাংলাদেশের সরীসৃপ বিশেশজ্ঞ শাহরিয়ার সিজার রহমান, ভারতীয় সরীসৃপ বিশেশজ্ঞ চিরাগ রায়, গবেষক ওয়াহিদুল ইসলাম অপু, কর্মসূচির জনসংযোগ কর্মকর্তা রূপা দত্ত এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ছাত্র আশিকুর রহমান অনিক এর তত্ত্বাবধানে এই মাদী সাপকে লাওয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।team python এদেশে এটিই প্রথম এই সাপের উপর রেডিও-অনুসরণের মাধ্যমে গবেষণা। গবেষকরা আশাবাদী যে এই উপায়ে তারা সাপটির চলাফেরা, খাদ্যাভ্যাস, তাপ,  বাসস্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন যা এই সাপের ভবিষ্যৎ গবেষণায় সাহায্য করবে। তারা মানুষের মধ্যে এ সাপের ভীতি দূর করে এবং এই সাপের বিরুদ্ধে বাঁচার জন্য সাপের ক্ষতি না করে কি করা যায় তা জানিয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করছে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে তারা শুধু এই সাপ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে না বরং এই প্রাণীর ব্যাপারে জরুরি তথ্য দেবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics