বাকৃবিতে পশুপালন অনুষদের গবেষকদের ব্যাপক সাফল্য
রাযীন আশরাফ
আমাদের দেশ খাদ্যে বেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও সকলের পুষ্টি নিরাপত্তায় আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের দেশে অধিক দুধ উৎপাদনকারী গরু থাকলেও অধিক মাংস উৎপাদনকারী গরুর ক্ষেত্রে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। দেশে অধিক মাংস উৎপাদনের লক্ষে অধিক মাংস উৎপাদনকারী ব্রাহমা গরুর ক্রস ঘটানো হয়েছে। অন্যদিকে, এই একই প্রকল্পে ছোট আকারের মুরগী হতে অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগীর জাত উদ্ভাবন করেছেন। এরূপ মোট ৫টি পৃথক গবেষণায় সাফল্য অর্জন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিষ্যবিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের পশু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও প্রকল্প উপব্যবস্থাপক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুজাফফর হোসেন। বাংলাদেশ প্রাণীসম্পদ গবেষণা অধিদপ্তরের আওতায়, তিন বছর মেয়াদী দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাণী সম্পদ ও পোলট্রির উদ্ভাবনেমুখী গবেষণা শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শেষে অধ্যাপক ড. মুজাফফর জানান, এই গবেষণা মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারলে মাংসের পাশাপাশি দিমের ৬০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে তিনি জানান।
পশুবিজ্ঞান অনুষদের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. মুজাফফর বলেন, বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছর মেয়াদী এই উপ-প্রকল্পটি পরিচালিত হয়। প্রকল্পটিতে অনুষদের পাঁচটি বিভাগে পাঁচটি মৌলিক গবেষণা চলে এবং প্রত্যেকটি সফলতা অর্জন করে। পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুজাফফর হোসেন দেশে প্রথম বারের মত দেশিয় জাতের গরুর মাংসের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন মাপকাঠি উদ্ভাবন করেছেন। পশুপ্রজনন ও কৌলি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আজহারুল হক দেশে প্রথমবারের মত অধিক মাংস উৎপাদনকারী ব্রাহমা গরুর ক্রস উদ্ভাবন করেছেন। অধিক দুধ উতপাদনে বাকলা বাছুরের বৈজ্ঞানিক লালন পালন ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছেন ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম। পশু পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. জেড এইচ খন্দকার গরু মোটাতাজাকরণের নির্ধারিত ওজন বৃদ্ধির জন্য দৈনিক খাদ্যের পুষ্টি ও পরিমাণের আদর্শ মান নির্ধারণে সফল হয়েছেন। অন্যদিকে, পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান হাওলাদার ছোট আকারের দেশীয় জাতের মুরগী হতে অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগীর জাত উদ্ভাবন করেন। গবেষকরা জানান তাদের পাঁচটি মৌলিক গবেষণার সব কয়টি অসামান্য সাফল্য পেয়েছে। এই সব গবেষণার ফলাফল শুধু প্রাণী সম্পদ উন্নয়নে নয় বরং বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে গবেষকরা দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. মুজাফফর আরও জানান তারা প্রাণী সম্পদ মন্ত্রালয় থেকে সর্বত্র এই সব গবেষণার ফলাফল মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিবেন। উল্লেখ্য এই গবেষণায় পশুপালন অনুষদের উন্নয়নের জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়।