বাংলাদেশে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে বন্যপ্রাণী তক্ষক

ফরিদ আহমেদ

বিবিসি বাংলা, ঢাকা

বন্যপ্রাণী তক্ষক ধরে বিক্রি করার চেষ্টার দায়ে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ।

বুধবার পিরোজপুরের নাজিরপুর থেকে দুটি তক্ষকসহ গ্রেপ্তারের পর মফিজুর রহমান নামের ঐ ব্যক্তিকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‍্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, ঐ ব্যক্তি প্রাণী দুটো নিয়ে প্রতারণাও করেছেন।

তক্ষক নামের বণ্যপ্রাণীটিকে বাংলাদেশে এখনো বিলুপ্ত ঘোষণা করা না হলেও, সরকারী কর্মকর্তারা বলছেন বিদেশে, বিশেষ করে চীন ও ভিয়েতনামে ব্যাপক চাহিদা থাকায় যে হারে এটির নিধন চলছে, তাতে অচিরেই একে বিলুপ্ত প্রাণীর কাতারে ফেলতে হবে।

বরিশাল অঞ্চলের র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‍্যাব এর কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আবুল বাশার বলছেন, ক্যান্সার চিকিৎসা সহ নানা দুরারোগ্য রোগ সারাতে সক্ষম, দুর্লভ প্রাণী বলে দাবি করে দুটি তক্ষকের জন্য কয়েক কোটি টাকা দাবী করা হয় এক ব্যক্তির কাছে।

“ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে তক্ষকের হাড় বা মাংস খেলে যৌন ক্ষমতা বাড়ে, কিংবা হাপানি, বাত, ব্যথার জন্যে এটি মহৌষধ। এ কারণে সারাদেশ জুড়ে একসময় থাকলেও এখন আর এদের তেমন দেখা মেলে না।”

অধ্যাপক নুরজাহান সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঐ প্রাণী দুটি দেখার জন্য এক ব্যক্তি পঞ্চাশ হাজার টাকা জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই ধরা পড়েন পিরোজপুরের নাজিরপুর মফিজুর রহমান।

র‍্যাব কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আবুল বাশার বলছেন, একসময় বাংলাদেশে প্রচুর তক্ষক পাওয়া যেতো। কিন্তু মূলত চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনামসহ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ওষুধ তৈরির জন্য ধরে ধরে পাচার করায় এর সংখ্যা উদ্বেগজনকহারেই কমে গেছে।130726171857_gecko_304x171_bbc

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক ড. নুরজাহান সরকার বলছিলেন, ”ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে তক্ষকের হাড় বা মাংস খেলে যৌন ক্ষমতা বাড়ে, কিংবা হাপানি, বাত, ব্যথার জন্যে এটি মহৌষধ। আর এ কারণে সারা দেশ জুড়ে এক সময় থাকলেও এখন আর এদের তেমন দেখা মেলে না।”

একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তক্ষক দেখা যেত বলে তিনি জানান।

“আধুনিকায়নের ফলে বন কমে গেছে আর লোকালয়ে মানুষ বেড়ে যাওয়ায় এদের সংখ্যাও কমে গেছে। পূর্ব এশিয়ায় প্রাণীটির বড় বাজার থাকায় সেখানেই এগুলো পাচার হয়ে যায়”

তপন কুমার দে, বাংলাদেশের বন কর্মকর্তা

তক্ষক নামের বণ্যপ্রাণীটির আটটি প্রজাতি রয়েছে এবং এগুলোকে বাংলাদেশে এখনো বিলুপ্ত ঘোষণা করা না হলেও এদের অস্তিত্ব সংকটে বলে জানাচ্ছেন সরকারী কর্মকর্তারা ।

তারা বলছেন বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় যে হারে এটির নিধন চলছে তাতে করে অচিরেই একে বিলুপ্ত প্রাণীর কাতারে ফেলতে হবে।

বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগের কর্মকর্তা তপন কুমার দে বলছেন, ”আধুনিকায়নের ফলে বন কমে গেছে আর লোকালয়ে মানুষ বেড়ে যাওয়ায় এদের সংখ্যাও কমে গেছে। পূর্ব এশিয়ায় প্রাণীটির বড় বাজার থাকায় সেখানেই এগুলো পাচার হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরেই এমনটা হচ্ছে আর এটা শান্ত প্রাণী যেভাবে ডাকে ওরা তাতে সহজেই পাওয়া যায়। জাল দিয়ে ধরে এগুলো পাচার হয়। যেভাবে এগুলো ধরে শেষ করা হচ্ছে অচিরেই হয়তো এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।”

মি দে বলছিলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তারা বাংলাদেশে একটি স্ট্যাটাস সার্ভে বা জরিপ চালাবেন এর পুরো পরিস্থিতি নিয়ে।

সূত্রঃ http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2013/07/130726_si_gecko_forest.shtml

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics