বাংলাদেশের ঝিঁ ঝিঁ ব্যাঙ

বর্ষা আসলেই ব্যাঙের ডাক যেন পরিচিত একটা শব্দ। চারিদিকে ব্যাংঙের কলরব যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয় , এখন বর্ষাকাল। সন্ধ্যা থেকে সারা রাত অবদি নানা প্রজাতির ব্যাঙের ডাক শোনা যায়। বর্ষামুখর দিন আর ব্যাঙের ডাকমুখর রাত। বর্ষাকালই ব্যাঙের প্রজনন সময়, তাই তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য পুরুষ ব্যাঙটি ডাকতে থাকে স্ত্রী ব্যাংটিকে আকৃষ্ট করার জন্য ।ব্যাঙের এই ডাক প্রজাতি ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। একেক প্রজাতি একেক ডাক। সাধারণত কোলা ব্যাঙের ডাকটি আমরা বেশি শুনি। 229933_408818529153542_1147103748_n

ব্যাঙরা সাধারণত একটু ভীতু আর লাজুক ধরণের হয়, দিনের বেলায় তাই সব ব্যাঙ খুঁজে পাওয়া যায় না, রাতে এদের দেখা মেলে বেশি। বছরের অধিকাশ সময় তারা লুকিয়ে থাকে, খাদ্যের সন্ধান ব্যতীত এর বের হয় কম। আর শীতকালে তো কথাই নেই, একেবারে লাপাত্তা। তবে বর্ষাকালে সবাই বের হয়, তাদের প্রজাতি রক্ষার তাগিদে। প্রাণি জগতে বংশধারা রক্ষা করা যেন একটা চ্যালেঞ্জ তাদের কাছে। প্রতিটি প্রাণিই চায় তাদের বংশধররা টিকে থাকুক এই পৃথিবীর বুকে।

যাই হোক বলছিলাম ব্যাঙের ডাক নিয়ে। Cricket শব্দটার একটা অর্থ হলো ঝি ঝি। Cricket Frog নামে আমাদের দেশে একধরনের ব্যাঙ পাওয়া যায়। এদের নাম ঝি ঝি ব্যাঙ সম্ভবত এই কারণে যে, এদের ডাকটা অনেকটা ঝিঁ ঝিঁ পোকার মত। ঝিঁ ঝিঁ পোকা যেমন একটানা ডাকে , এদের ডাকটা সেরকম নয়। এরা একটানা ডাকে না , এদের ডাকার মধ্যে একটা রিদম আছে। সন্ধ্যা হলেই রাস্তার পাশে জলাশয়ে , ধানক্ষেতে কিংবা যেখানে মানুষের আনাগোনা কম এরকম অল্প গভীর জলাশয়ে এদের ডাকতে শোনা যায়।

এই ব্যাঙগুলোর স্বরথলি দুধরণের হয়, একটা বাহ্যিক আর একটা অভ্যন্তরীন। আমাদের দেশে যে ঝিঁ ঝিঁ ব্যাঙ পাওয়া যায় এদেরটা বাহ্যিক স্বরথলি। এই স্বরথলি গুলোর রং কালো এবং নানা আকৃতির হয়, কোনটা অর্ধচন্দ্রকার, কোনটা ডাব্লিউ এর মত দেখতে, আবার কোনটার দুপাশে কালো দাগের মত , এর রকম নানা ধরণের।

সম্প্রতি আমাদের দেশে যে ঝিঁ ঝিঁ ব্যাঙটি (Fejervarya asmati,Howlader 2011)আবিস্কৃত হয়ে সেটার স্বরথলির আকৃতি প্রজাপতির ডানা মত। ঝিঁ ঝিঁ ব্যাঙ গুলোর একটা বৈশিষ্ট হলো বিভিন্ন প্রজাতিরা এক সাথে থাকে এবং প্রায়ই একি সুরে ডাকতে থাকে। প্রতিটা ডাক আলাদা আলাদা তবে কোথায় যেন একটা মিল আছে, খুব মনযোগ দিয়ে না শুনলে আলাদা করা যায় না। সারা বিশ্বে প্রায় 33 প্রজাতির Cricket Frog পাওয়া যায়।

আর আমাদের দেশে পাওয়া যায় 7 প্রজাতির । এদের গণের নাম হলো Fejervarya(ফেজারভারিয়া) । আমাদের আরও অনেক প্রজাতি আছে যেগুলো এখনো সনাক্ত করা সম্ভব হয় নি। কেননা আমাদের দেশে ব্যাঙ নিয়ে খুব কম লোকই কাজ করে। আশা করছি ভবিষতে ব্যাঙ নিয়ে মানুষের কাজ করার আগ্রহ বাড়বে। এদের সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করবে। কেননা প্রকৃতির জীববৈচিত্রের ভারসাম্য রক্ষায় এদের ভূমিকাও অনন্য।

আমাদের দেশে যে ছয় প্রজাতির Fejervarya(ফেজারভারিয়া) পাওয়া যায় তার তালিকা:
Fejervarya asmati,Howlader 2011
Fejervarya nepalensis, Iskandar, 1998[verification needed] Fejervar pierrei, Dubois, 1975
Fejervarya syhadrensis, Annandale, 1919
Fejervarya teraiensis, Dubois, 1975
Fejervarya cancrivora, Gravenhorst, 1829
Fejervarya limnocharis, Gravenhorst, 1829

তথ্যসূত্র ও ছবি : Herpetology Labpratory ‘Bangladesh.

লেখক: আব্দুর রাজ্জাক,ছবিস্বত্ত্ব:লেখক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics