বাঁধ ভেঙে ডুবেছে গ্রামের পর গ্রাম, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ
ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাব ও কয়েকদিনের টানা বর্ষণে বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া টানা বর্ষণে ফসলের ক্ষেত ও সবজি বাগান তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ফেরিঘাট বন্ধ হয়ে বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) : উপজেলার বিষখালী নদীর পাড়ের জয়খালী, চিংড়াখালী, মশাবুনিয়া, হেতালবুনিয়া, আওরাবুনিয়া, জাঙ্গালিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। আউশ বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। জয়খালী গ্রামের কৃষক খলিল মিয়া অভিযোগ করেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায় এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তিন হাজার ৪৩৯ হেক্টর জমির ১৩ জাতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১২৮ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ও এক হাজার ৯০৭ হেক্টর জমির ফসল আংশিক বিনষ্ট হয়েছে।
গলাচিপা (পটুয়াখালী) : উপজেলার ২২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমির রবিশস্য ঘূর্ণিঝড় ও প্রবল বর্ষণে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ওপর নির্মিত স্লুইস গেট স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় বিরামহীনভাবে পানি নামতে পারছে না। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের ১০ দিন পরও অনেক এলাকা জলাবদ্ধ রয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৯ কোটি নয় লাখ টাকা। চর আগস্তি গ্রামের সায়েম গাজি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের ১০ দিন পরও তার ৫ একর জমির মরিচ এবং ৩ একর জমির বাদাম দেড় ফুট পানির নিচে রয়েছে। এতে তার ক্ষতি হয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা।
কেশবপুর (যশোর) : উপজেলার গৌরীঘোনা ইউনিয়নের শ্রীনদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রামরক্ষা বেড়িবাঁধটি রোববার বিকেলে পানির চাপে ভেঙে সন্ন্যাসগাছা, ভরতভায়না, আগরহাটি ও কাশিমপুর গ্রামে পানি ঢুকে শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং দুই শতাধিক বিঘা জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিস্তীর্ণ এলাকা পল্গাবিত হওয়ার আশঙ্কায় আরও পাঁচ গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ইউএনও আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম জানান, কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে জরুরিভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে বাঁধ মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে বাঁধ মেরামত করতে হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
বেতাগী (বরগুনা) : উপজেলার আলিয়াবাদ এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে দক্ষিণ কালিকাবাড়ি, কালিকাবাড়ি, আলিয়াবাদ, ভোড়া, বেতমোড়সহ প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রাম, নষ্ট হয়েছে কয়েক হাজার একর ফসলের মাঠ, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচ হাজার মানুষ। অনেকে রাস্তায়, জেলে নৌকায় ও উঁচু জমিতে আশ্রয় নিয়েছে।
পাবনা : সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় চারশ’ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে ধান, তিল, ভোট্টা ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ টন ধান এবং ২০০ থেকে ৩০০ টন তিল ও ভুট্টার ক্ষতির আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।
স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর) : বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের বেকুটিয়া (কাউখালী) ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের ১৫ জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই ঘাটের কাউখালী তীরের ফেরি পন্টুনের গ্যাংওয়ে নষ্ট ও ফেরির ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রোববার বিকেল থেকে গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত ওই সড়কে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সন্ধ্যা নদীর দুই পারে শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রী।
ফেরি বিভাগের ইলেক্ট্রিশিয়ানরা জানান, কাজ শেষ করতে আরও দু’তিন ঘণ্টা সময় লাগবে।
বাগেরহাট : বাগেরহাটের পাঁচ উপজেলার ৫০ গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার উঠতি বোরো ধানের বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। একই সঙ্গে আউশ আবাদ ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক নষ্ট হয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে চিংড়ি ঘের, পুকুর, মাছের খামার ভেসে গেছে।
অন্যদিকে পানির প্রবল চাপে জেলার রাধাবল্লভ, ডেমা, চাঁপাতলা, যাত্রাপুর, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল, চিতলমারী, কচুয়া, মংলা ও সদর উপজেলার অন্তত ১০ স্থানে বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। কোথাও কোথাও বাধেঁর ওপর দিয়ে পানি ঢুকছে।
জেলা প্রশাসক মু. শুকুর আলী জানান, ভারি বর্ষণে ক্ষতি নিরূপণে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জিয়ানগর (পিরোজপুর) : জিয়ানগরে কচা ও বলেশ্বর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িঁবাধ ডুবে উপজেলা সদরের চাড়াখালীর গুচ্ছগ্রাম, খাদ্যগুদাম ঘাট, ইন্দুরকানী ফেরিঘাট, থানা ভবনের চত্বর, ইন্দুরকানী পত্তাশী কেয়ারের সড়ক, ইন্দুরকানী কালাইয়া সড়কসহ পানি ঢুকে নদী তীরবর্তী টগড়া, উমেদপুর, টেংড়াখালী, হোগলাবুনিয়া, সেউতিবাড়িয়া, গাবগাছিয়া, রামচন্দ্রপুর, পত্তাশী, সাঈদখালী, ঢেপসাবুনিয়া, চরবলেশ্বর, চণ্ডিপুর, বালিপাড়া, খোলপটুয়া, কলারণ, কালাইয়া, ইন্দুরকানীসহ বেশিরভাগ গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। দুই হাজার হেক্টর জমির বোরো ও আউশ ধানের রোপা পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া চর সাঈদখালী ও পাড়েরহাট আবাসন পানিতে ডুবে যায়।
চরের বাসিন্দারা সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান করছেন।
সূত্রঃ দৈনিক সমকাল (২৮/০৫/২০১৩)
http://www.samakal.net/print_edition/details.php?news=16&action=main&menu_type=&option=single&news_id=347806&pub_no=1421&type=