প্রাণী–হারিয়ে যাচ্ছে বুনো হাতি!
পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি রয়েছে। এদের মধ্যে এশীয় হাতির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। বাংলাদেশের মধুপুর গড় থেকে শুরু করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালী এলাকায় একসময় হাতির অবাধ বিচরণ ছিল। বাসস্থান ধ্বংস, বন উজাড়, জনসংখ্যার চাপ, সংরক্ষণের অভাব, খাদ্যের অভাব ও চলাচলের পথে বাধার কারণে আমাদের দেশে হাতির অবস্থা সঙ্গিন।
১৯ আগস্ট, ২০১২ রাঙামাটির বরকলে গিয়ে পাঁচটি হাতির দেখা পেলাম। স্থানীয় লোকজন জানালেন, ১৫টি হাতির একটি দল দুই বছর ধরে এ এলাকায় বিচরণ করছে। দিনের বেলায় এরা পাহাড়ের ঘন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে। খুব ভোরে এবং রাতে এরা খাবার খেতে বের হয়। মাঝেমধ্যে মানুষের বাড়িঘর ভেঙে দেয় ও ফসল নষ্ট করে।
হাতি আজ আমাদের দেশের একটি বিপন্ন প্রাণী। বর্তমানে হাতি শুধু চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরহরিৎ বনে অল্প কিছু টিকে আছে। আইইউসিএন বাংলাদেশের এক জরিপে দেখা গেছে, আমাদের দেশে বন্য অবস্থায় হাতির সংখ্যা মাত্র ২৫০টি। এ ছাড়া কিছু হাতি পাশের দেশ ভারতের আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করে।
হাতি সামাজিক প্রাণী। স্ত্রী হাতিগুলো তাদের বাচ্চাদের নিয়ে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। পুরুষ হাতি শুধু প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী হাতির দলে যোগ দেয়। প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর পর পর স্ত্রী হাতি একটিমাত্র বাচ্চা প্রসব করে থাকে এবং পুরো জীবদ্দশায় ১০ থেকে ১২টি ্বাচ্চা জন্ম দেয়। একটি হাতি ৬০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। হাতির গর্ভধারণকাল ১৮ থেকে ২০ মাস। এরা ঘাস, লতাপাতা, বাকল, ফলমূল ইত্যাদি খায়। এদের দৃষ্টিশক্তি কম, কিন্তু ঘ্রাণ ও শ্রবণশক্তি প্রবল। বিশালকায় এসব হাতির চারপাশে দরকার বিশাল বনভূমি। কিন্তু আজ মানুষের বিবেকহীন উন্নয়ন-নিষ্ঠুরতার জন্য মানুষের প্রতিবেশী অনেক জীবনের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। আকারে বড় হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে হাতি। প্রায়ই পত্রিকায় দেখা যায়, বন্য হাতিগুলো লোকালয়ে ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতি করছে। ফসল নষ্ট করছে। ফলে দু-একটি হাতি আহত কিংবা মারা পড়ছে। এ ছাড়া দাঁত, চামড়া ও মাংসের জন্য প্রতিবছর গোপনে বন্য হাতি নিধন তো চলছেই।
হাতি রক্ষার ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমাদের দেশ থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে এই প্রাণী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হাতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া হাতিকে বলা হয় আমব্রেলা স্পিসিস। কারণ, একটি হাতি বনে ছাতার মতো কাজ করে। অর্থাৎ, হাতি যদি বেঁচে থাকে, তাহলে বনও টিকে থাকবে। আর একটি বনের টিকে থাকা মানে হাজারো জীববৈচিত্র্যের জীবন বেঁচে যাওয়া, পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক থাকা। গন্ডার, বারশিঙ্গা, বুনো মহিষ, গোলাপি মাথার পাতিহাঁস প্রভৃতি প্রাণী দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হাতি যেন সে পথ না ধরে, সে জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-03-02/