পিঁপড়া যখন অনুপ্রেরণা!
আকারে নেহাত ক্ষুদ্র হলেও কালে কালে পিঁপড়া থেকে অনেক কিছুই শিখেছে মানুষ। বিশেষ করে পরিশ্রমের কোনো উদাহরণ দিতে হলে সেই আদিকাল থেকেই তুলনা চলে পিঁপড়াদের সাথে। তবে এসব তুলনামূলক উপদেশের বাইরে বিজ্ঞানীদের জন্যও কালে কালে কম বিস্ময় উপহার দেয়নি পিপীলিকাকূল। আর এর সর্বশেষ উদাহরণ হয়েই এবার এসেছে পিঁপড়ার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে বানানো বিশেষ কিছু রোবট। মূলত পিঁপড়ারা যেভাবে খুব সহজেই মাটির নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে ঠিক সেভাবে পিঁপড়া রোবটগুলোও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ভেদ করে চলাফেরা করতে পারবে। এর ফলে ভবন ধ্বস বা কোনো স্থানে আটকে পড়া মানুষ সম্পর্কে অনেক দ্রুত ও নির্ভুল তথ্যও জানতে পারবেন উদ্ধারকাজে নিয়োজিত থাকা ব্যক্তিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকেরা দ্রুতগতির ক্যামেরা ও কাঁচের বিশেষ পর্দা ব্যবহার করে ‘ফায়ার অ্যান্ট’ নামক পিঁপড়া প্রজাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন যারা প্রতিবেশকে কাজে লাগিয়ে মাটি বা বালির নিচে অসাধারণ দক্ষতায় স্থিতিশীল সুড়ঙ্গ তৈরি করে। ঠিক একইভাবে পিঁপড়া রোবটগুলোও তাদের পায়ে লাগানো চাকার সাহায্যে চলাফেরা করতে পারবে। আর এই চাকাগুলো সচল রাখবে অতি ক্ষুদ্রাকৃতির দুটি মোটর। আবার আসল পিঁপড়ারা যেভাবে তাদের শরীর থেকে নিঃসৃত এক ধরনের রস শুকে শুকে দিক ঠিক রাখে তেমনি এই পিঁপড়া রোবটগুলোও নিজেদের পথ ঠিক রাখার জন্য গন্ধের পরিবর্তে আলোক সংকেত ব্যবহার করবে। এজন্য পিঁপড়া রোবটের সাথে সংযুক্ত থাকছে বিশেষ এক ধরনের আলোক নিঃসরক যন্ত্র। এই আলো যেন অন্যরা অনুসরণ করতে পারে সেজন্য প্রতিটি রোবটের মাথায় আবার একটি করে অ্যান্টেনাও রাখা হয়েছে। যখন পিঁপড়া রোবটগুলো একই পথে চলাচল করবে তখন নিঃসরিত আলোকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। এ সময় কোনো রোবটের বাঁ-দিকে অ্যান্টেনায় বেশি আলো পড়লে সে বাঁ-দিকে এবং ডানদিকের অ্যান্টেনায় বেশি আলো পড়লে সে ডানদিকে যাবে। আর এভাবেই বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আস্তে আস্তে সুড়ঙ্গ বানিয়ে প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছুবে রোবট পিঁপড়া। আর সেখান থেকে সংযুক্ত ক্যামেরার মাধ্যমেই জানা যাবে ঘটনাস্থলের সর্বশেষ অবস্থা।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক (২৫/০৫/২০১৩)