পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বাড়ছেই
অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনের স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না করায় চট্টগ্রাম নগরে পাহাড়ের ওপর ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে নগরের ১৪টি পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা এক হাজার ছুঁয়েছে। বর্ষার আগে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পাহাড়ধসে বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগরে প্রায় প্রতিবছরই বর্ষাকালে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ২০০৭ সালের পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময় কমিটির সদস্যরা নগরের বিভিন্ন পাহাড় পরিদর্শন করেন। তখন তাঁরা ১২টি পাহাড়ে ছয় শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বসতি চিহ্নিত করেন। কিন্তু কমিটি গত ছয় বছরেও পাহাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও ঝুঁকি নিয়ে বাস করা পরিবারগুলোর স্থায়ী পুনর্বাসন করতে পারেনি। এতে বসতির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এই তালিকায় বিশ্বকলোনি নামে নতুন একটি পাহাড় যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে নগরের ১৩টি পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা এক হাজারে ঠেকেছে বলে কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন।
‘লোক দেখানো উদ্যোগ’: প্রতিবছর বর্ষাকালে কমিটি নানা তৎপরতা শুরু করলেও তা কোনো কাজেই আসে না। গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টি শুরু হলে নগরের মতিঝর্ণা, টাংকির পাহাড় ও আকবর শাহ এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান গত ৫ মে বৃষ্টির মধ্যে মতিঝর্ণা এলাকায় নিজে গিয়ে এ নির্দেশ দেন। তখন পাহাড়ের কোনো বাসিন্দাই ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাননি।
গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ঝুঁকি নিয়ে বাস করা পরিবারগুলোকে অস্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য তাঁবু খাটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কমিটি তৎপরতা শুরু করেছে। বাটালি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আবদুল খালেক বলেন, ‘ওনারা আমাদের নাকি তাঁবু খাটিয়ে রাখবে। কিন্তু আমার ঘরের জিনিসপত্র কে দেখবে? তাঁবুর ভেতরে কি থাকা যায়?’
সরেজমিনে একদিন: ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত বছর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা ছিল। কিছু অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও বেশির ভাগই হয়নি। আবার বিচ্ছিন্ন করা সংযোগ পুনরায় অবৈধভাবে লাগানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বৈধ সংযোগও দেখা গেছে। মতিঝর্ণা হোসেন সাহেবের কলোনিতে এ রকম সংযোগ পাওয়া গেছে। অথচ এই কলোনিতে ২০০৮ সালে পাহাড়ধসে কয়েকজন মারা যায়। তখন মামলাও হয়েছিল। কিন্তু পরে রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে তা প্রত্যাহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দেওয়ার কথা নয়। আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলেছি।’
মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় কেটে উঠছে নতুন ভবন। মাছ বাজার এলাকায় এমনি দুটি ভবন নির্মিত হচ্ছে। ভবন দুটি জেলা প্রশাসকের নজরেও আসে। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কীভাবে এই ভবনের নকশা অনুমোদন করল? এটা দেখতে হবে।’ এ ব্যাপারে সিডিএর নগর পরিকল্পনাবিদ সরওয়ার উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভবনটি কে, কীভাবে করছে খতিয়ে দেখতে হবে। যদি নকশা না থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো (১৫/০৫/২০১৩)
প্রণব বল