পানি নিয়ে নানা কথা আর পরিসংখ্যান
পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না কোনো জীব। এ সব সবার জানা কথা। কিন্তু পানির রয়েছে কিছু অনন্য প্রকৃতি। তা কি জানেন আপনি?
তা হলে আসুন শুরু করি আমাদের দিয়েই। আমাদের আপাদমস্তক অর্থাত বেশির ভাগ দেহজুড়ে রয়েছে পানি। যথাক্রমে তরুণ দেহের ৬০ এবং তরুণী দেহের ৫৫ শতাংশ জুড়ে রয়েছে পানি।
তরুণ দেহের তুলনায় তরুণী দেহের চর্বির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। চর্বিতে পানি কম থাকে বলে দুই দেহ পানির এ তফাত দেখা দেয়।
অন্যদিকে একটা শিশুর দেহে ৭৮ শতাংশই পানি।
শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদদের দেহে পানির পরিমাণ ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ।
শুনলে অবাক হতে পারেন যে, ঘণ্টায় ১০.৯ কাপ পানি ঘাম হয়ে ঝরে যেতে পারে একজন টেনিস খেলোয়াড়ের দেহ থেকে।
এ কথা বোধহয় অনেকেই জানেন না যে, মস্তিস্কের ৭০ শতাংশই পানি।
কোনো রকম খাবার ছাড়া একটা মানুষ এক মাস বাঁচতে পারলেও পানি ছাড়া বাঁচতে পারে মাত্র ১ সপ্তাহ।
পানি! হা পানি!
বিশ্বের প্রতি আটজনের মধ্যে একজন অর্থাৎ ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে ৮৭ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ পান করার জন্য নিরাপদ পানি পায় না।
টয়লেটের কল থেকে প্রতি সেকেন্ডে এক ফোঁটা করে পানি পড়ছে। কেউ তা নিয়ে মাথাও ঘামাচ্ছেন না। কিন্তু এ ভাবে বছরে নষ্ট হচ্ছে ২৬৪২ গ্যালন পানি!
এবার কি নজর দেবেন টয়লেট কিংবা রান্না ঘরের কলটার দিকে!
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পাইপ ফুটো থাকায় ১০ গ্যালনের মধ্যে ৬ গ্যালন পানি কখনোই আর ক্রেতার বাসায় পৌঁছে না। সিঙ্গাপুরে এভাবে নষ্ট হয়ে যায় ৬ শতাংশ পানি।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশের বহু মানুষ সারাদিনের ব্যবহারের জন্য পেয়ে থাকেন মাত্র ৭.৯ গ্যালন পানি। কিন্তু আমেরিকায় পাঁচ মিনিট গোসলেই ব্যয় হয় ও পরিমাণ পানি।
পানি নিয়ে টুকিটাকি…
যে কোনো গরমের পুরোদিনে ‘মরুভূমির জাহাজ’ নামে পরিচিত উট ৫৩ গ্যালন পানি পান করতে পারে। তবে উট কিন্তু নিজ কুঁজে পানি জমিয়ে রাখতে না। এ পানি জমে থাকে উঠের রক্তধারায়।
তুষার, বৃষ্টি বা শিশির হয়ে ঝড়ে পড়ার আগে গড়ে পানি ১০ দিনে ভেসে থাকতে পারে।
বৃষ্টির ফোঁটা সাধারণত সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ মিলিমিটার হয়। বাতাসের সাথে ঘষা খেয়ে এ সব ফোঁটা ভেঙে ছোট ছোট আকার ধারণ করে।
আবহম লে মেঘ বা জলীয় বাষ্প হয়ে পানি মিশে আছে। এ কথা শিখেছি সেই ভূগোল পাঠের প্রায় সূচনার দিনগুলোতে। কিন্তু যে কোনও সময়ে কি পরিমাণ পানি মিশে আছে জানেন? হ্্যাঁ, আবহম লে মেঘ বা জলীয় বাষ্পের আকারে পরিমাণ পানি থাকে তার পরিমাণ ৩,১০০ বর্গ মাইল।
আপনি কি জানেন, একটা বড়সড় গাছ যেমন- ওক গাছ থেকে প্রতিদিন ১০৫ গ্যালন পানি বাষ্প হয়ে বের হয়ে যায়!
৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয় এ কথাও আমরা অনেকেই জানি। কোটি কোটি মিশ্র উপাদানের পানি একমাত্র উপাদান যা তরল অবস্থায় কঠিন অবস্থার থেকে ভারি হয়ে থাকে। আর এ কারণেই বরফ পানিতে ভাসে।
অন্যদিকে হিমবাহের ১৩ শতাংশ বা এক অষ্টমাংশ থাকে পানির ওপরে। আর ৮৭ শতাংশ থাকে পানির নিচে।
৩৩,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০
উপরের সংখ্যাটা থেকে আঁতকে উঠেছেন কি! ৪.২ কাপ পানিতে থাকে ওই পরিমাণ পানির অণু। আর এ কথাও আমরা জানি, দু’টি হাইড্রোজেন একটি অক্সিজেনের পরমাণু নিয়ে গঠিত হয় একটি মাত্র পানির অণু।
সব খাবারেই পানি থাকে, এমনকি আপাত দৃষ্টিতে যে খাবারকে শুকনা বলে মনে হচ্ছে তাতেও থাকে পানি।
১০০ গ্রাম শশায় থাকে ৯৫ গ্রাম পানি। ১০০ গ্রাম আলুতে থাকে ৮০ গ্রাম পানি। ১০০ গ্রাম কলায় থাকে ৭৫ গ্রাম পানি। ১০০ গ্রাম নোনা চিনাবাদাম ভাজায় থাকে ১ গ্রাম পানি। ১০০ গ্রাম কর্ন ফ্লেকসে থাকে ৪ গ্রাম পানি।
কতটা পানি হলে…
‘কত ধানে কত চাল’- এ কথা কমবেশি প্রায় সবাই বলি বা শুনি। কিন্তু কত পানি থেকে কতটা খাবার পাওয়া যায় সে হিসেবে বোধহয় করিনি আমরা কেউ। তা হলে এবার তারও একটা হিসাব নেই।
প্রায় এক কিলোগ্রাম চাল উৎপাদনে ব্যয় হয় ৮৯৮ গ্যালন পানি। সম পরিমাণ গোশত উতপাদনে লাগে ৪,০৯৪ গ্যালন পানি। আর এক কাপ কফি উৎপাদনে ব্যয় হয় ৩৭ গ্যালন পানি।
পৃথিবীতে পানির পরিমাণ নিয়ে কিছু কথা…
পৃথিবীর ৭১ শতাংশ জুড়ে রয়েছে সাগর মহাসাগর।
পৃথিবীর ১.৭ শতাংশ পানি রয়েছে ভূগর্ভে।
ভূপৃষ্টে বরফ ও স্থায়ীভাবে জমাট হয়ে আছে বিশ্বের ০.০২২ শতাংশ পানি।
বিশ্বের হ্রদগুলোতে ০.০১৩ শতাংশ পানি।
পৃথিবীর মাটিতে আদ্রতার আকারে রয়েছে ০.০০১ শতাংশ পানি।
০.০০০৮ শতাংশ পানি রয়েছে বিশ্বের জলাভূমিতে।
এ ছাড়া, বিশ্বের পানির ০.০০০১ শতাংশ হলো ‘জৈব পানি’ অর্থাৎ গাছ-পালা-উদ্ভিদ লতা-পাতা ও জীব-জন্তুতে রয়েছে যে পানি।
বিশ্বের পানির ০.০০১ শতাংশ রয়েছে আবহম লে।
০.০০০২ শতাংশ পানি রয়েছে নদীতে।
হিমবাহ, তুষার, পবর্তশৃঙ্গের বরফে রয়েছে ১. ৭৪ শতাংশ পানি।
বিশ্বের পানির ৯৬.৫ শতাংশ রয়েছে মহাসাগরগু
সুত্রঃ দৈনিক গণকন্ঠ ১৭/০৪/২০১৩