দেশী ময়ূর
দেশি ময়ূর (Pavo cristatus) (ইংরেজি Indian Peafowl) ফাসিনিয়াডি পরিবারের অন্তর্গত বড় ও উজ্জ্বল রঙের পাখি। এরা দক্ষিণ এশিয়ার স্হানীয় পাখি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন স্হানে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরা সাধারনত আদ্র ও শুষ্ক পাতাঝরা বনে এবং পানির প্রাচুর্য সমৃদ্ধ এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়। ১৭৫৮ সালে লিনিয়াস প্রথম এই প্রজাতির নামকরণ এবং বর্ণনা দেন । আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা আশংকাহীন বলে ঘোষণা করেছে।
পুরুষ ময়ূরের দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৪৬ ইঞ্চি এবং পরিপূর্ণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত লেজের দৈর্ঘ্য ৭৮ থেকে ৯০ ইঞ্চি। এদের ওজন ৪ থেকে ৬ কেজি হয়ে থাকে ।পুরুষ ময়ূরের গায়ের রঙ নীল। এদের একটি পাখার মতো লেজ আছে। লেজের মধ্যে অনেকগুলো রঙ্গিন দাগ আছে যা দেখতে অনেকটা চোখের মত। এদের মাথায় গাঢ় নীল রঙের মুকুট দেখা যায়। এদের মাথার পালকগুলো ছোট এবং বাকানো। চোখের উপর সাদা দাগ এবং নিচে অর্ধচন্দ্রাকৃতির সাদা দাগ দেখা যায়। স্ত্রী ময়ূর পুরুষের তুলনায় ছোট। এদের দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৩৮ ইঞ্চি এবং ওজন ২.৭৫ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের ঘাড় সবুজ রঙের এবং পালকগুলো খয়েরি রঙের। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ দেখতে স্ত্রীর মত কিন্তু এদের পাখার রঙ বাদামি।
দেশি ময়ূর সর্বভূক প্রাণী। এদের খাবারের মধ্যের আছে বীজ, পোকামাকড়, ফল, ছোট স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপজাতীয় প্রাণী। এরা ছোট সাপ খেতে পছন্দ করে কিন্তু বড় সাপ থেকে দূরে থাকে।
দেশি ময়ূর বহুগামি স্বভাবের হয়। প্রজনন কাল শুরুর জন্য এরা বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। এরা ২-৩ বছর বয়সের মধ্যে প্রজননে সক্ষম। পুরুষ তার পাখাকে চারদিকে মেলে স্ত্রী ময়ূরকে প্রজননের জন্য আকৃষ্ট করে। পুরুষ ময়ূর পাতা, কাঠি ও খড়কুটা দিয়ে বাসা বানায়। স্ত্রী ময়ূর এই বাসায় ডিম পারে। এরা একসাথে ৪-৮ টি ডিম পারতে পারে। ডিমগুলো সাদা রঙের। ডিমে তা শুধু স্ত্রী ময়ূরই দেয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে পুরুষ ময়ূরকেও তা দিতে দেখা যায়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ২৮ দিনের মতো সময় লাগে। বাচ্চাগুলো জন্মের পরপরই মায়ের সাথে থাকতে শুরু করে।