দূষণে বিপন্ন কর্ণফুলী নদী
আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম
দূষণে বিপন্ন হয়ে পড়ছে চট্টগ্রামের ‘লাইফ লাইন’খ্যাত কর্ণফুলী নদী। কর্ণফুলীর পারে গড়ে ওঠা কয়েক হাজার কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও নগরীর মনুষ্যসৃষ্ট আবর্জনায় দূষিত হয়ে পড়ছে এ নদীটি। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে নদীটির জীববৈচিত্র্য। গত ২৩ বছরে নদী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির মাছ। পাশাপাশি দূষিত পানি ব্যবহারে বাড়ছে রোগব্যাধি। দিন দিন নদীটি বিপন্ন হয়ে চললেও দেখার যেন কেউ নেই। আর এ দূষণের জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৮ সালের এক গবেষণায় কর্ণফুলীর পারে ৭০০ শিল্প প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ রয়েছে। বর্তমানে এর পরিমাণ ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অধিকাংশ কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন যন্ত্র (ইটিপি) নেই। যেসব প্রতিষ্ঠানের আছে তারাও ব্যবহার করে না। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর মতে ২১৭টি প্রতিষ্ঠান বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে ফেলে ভয়াবহভাবে নদী দূষণ করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯টি ট্যানারি ফ্যাক্টরি, ২৬টি টেক্সটাইল মিল, ২টি রাসায়নিক কারখানা, ৫টি মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ৪টি সাবান ফ্যাক্টরি, ২টি তেল শোধনাগার, বিটুমিন প্লান্ট, সিইউএফএল, কাফকো, চন্দ্রঘোনা পেপার মিল।
দূষণ তালিকার শীর্ষে রয়েছে সরকারি চারটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিউএফল) ও কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানগুলোরও কোনো শুধু সিটি কর্পোরেশনই প্রতিদিন ৭৬০ থেকে ৮০০ টন বর্জ্য কর্ণফুলীতে ফেলছে। এছাড়া জাহাজের দূষিত পানি, তেল, অন্যান্য আবর্জনা তো রয়েছেই। নদীর দু’পারে গড়ে উঠেছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বসতি। মনুষ্যবর্জ্য নদীতে ফেলে দূষণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তবে পরিবেশ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী ৩৯টি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী দূষণের জন্য দায়ী। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি অধিদফতর। তবে মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করে দায়িত্ব শেষ করে তারা। সর্বশেষ ২০১১ সালের ৬ জুন দুটি কারখানাকে ৫১ লাখ টাকা জরিমানা করে তারা। দূষণের ফলে কর্ণফুলী নদীতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ০৫/০৬/২০১৩