ডায়নোসরের বংশধর !!!!
মাহবুব রেজওয়ান
জীববৈচিত্র্যে আর নানা প্রাকৃতিক বিস্ময়ে ভরপুর এই সুন্দর পৃথিবীর জন্ম আজ থেকে কয়েকশ মিলিয়ন বছর আগে। কালের বিবর্তনে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে অনেক প্রাণী আর প্রজাতি। একটা সময় ছিল, যখন পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতো প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী ডায়নোসর। কালের পরিক্রমায় ডায়নোসর আজ হারিয়ে গেছে। ধারণা করা হয় একটা মহাবিপর্যয়ের কারণে পৃথিবী থেকে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে তাদের বংশধরদের কেউ কেউ এখনো টিকে আছে, তবে কিছুটা পরিবর্তিত রুপে। আজ আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি দারুন শক্তিশালী এবং চতুর এক শিকারী প্রাণী “কুমির” নিয়ে যেটিকে বলা যায় ডায়নোসেরের জীবন্ত ফসিল।
কুমির সাধারনত উষ্ণ পরিবেশে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া এরা খুব একটা পছন্দ করে না। এই কারণে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়শিয়া, ফিলিপাইন, ভারত ও পাকিস্তানের জলাভূমিতে এদের বেশি দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সাধারনত দুই ধরনের কুমির দেখতে পাওয়া যায়। মিঠা পানির কুমির (Crocodylus palustris) এবং লোনা পানির কুমির (Crocodylus porosus)।
কুমির ডাঙ্গার তুলনায় পানিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাই বলে ডাঙ্গায় এদের অসহায় ভাবলে আপনি ভুল করবেন। পানিতে এরা প্রতি ঘণ্টায় ২০ মাইল বেগে সাঁতার কাটতে পারে। এতো দ্রুত সাঁতার কাটার জন্য এদের লম্বা, শক্তিশালী লেজ এদের দারুন সাহায্য করে। একদমে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় এরা পানিতে কাটিয়ে দিতে পারে। ডাঙ্গাতেও এরা কম যায় না। কুমির ডাঙ্গায় প্রতি ঘণ্টায় ১১ মাইল বেগে আপনার দিকে ছুটে আসতে পারে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক কুমির সাধারনত ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু কুমির এর থেকেও বড় হয়। এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে বড় কুমির হচ্ছে লোলোং প্রজাতির একটি কুমির। এটি একটি লোনা পানির কুমির। কুমিরটি ফিলিপাইনের একটি ইকোপার্কে পাওয়া যায়। এটি লম্বায় ছিল ৬.১৭ মিটার এবং কুমিরটির ওজন ছিল প্রায় ১০৭৫ কেজি। কুমির বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম ব্রিটন পরিমাপ করে নিশ্চিত করেন এটিই পৃথিবীর সবথেকে বড় কুমির। এর আগে প্রাপ্ত সবথেকে বড় কুমিরটি ছিল ৫.৪৮ মিটার। সেই কুমিরটিও ছিল লোনা পানির কুমির। একটি কুমির সাধারনত ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তবে একশ বছরেরও বেশি আয়ু পেয়েছে এমন কুমিরও দেখা যায়।
শিকারি প্রাণী হিসেবে কুমিরের কোন জুড়ি নেই। বলতে গেলে কুমির তাদের ধারালো ও শক্তিশালী দাঁত দিয়ে ধরতে পারে এমন সবকিছুই খায়। এরা সব ধরনের মাছ থেকে শুরু করে কচ্ছপ, বানর এমনকি বুনো মোষ পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। এছাড়াও বিভিন্ন সরীসৃপ ও ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীও এদের খাবার তালিকার অন্তর্ভুক্ত। সুযোগ পেলে এরা মানুষকেও ছাড়ে না। শিকারি হিসেবে এতো দক্ষ হওয়ার কারণ এদের দৈহিক গঠন। সম্পূর্ণ দেহটি পানির নিচে রেখে শুধুমাত্র চোখ দুটি বের করে এরা শিকারের অপেক্ষায় থাকে। এদের মাথার দু পাশে রয়েছে ছোট্ট দুটি কান। যা দেখাই যায় না বলতে গেলে। কিন্তু দেখা না গেলে কি হবে, এদের শ্রবণশক্তি খুবই তীক্ষ্ণ। পানির মধ্যে সামান্য আলোড়নও এরা সহজেই টের পেয়ে যায়। তবে কুমির পানিতে থাকা অবস্থায় এদের কান বন্ধ করতে পারে। তাছাড়া এদের ঘ্রানশক্তিও অনেক শক্তিশালী।
জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কুমিরের ভূমিকা অনেক। শুধু তাই নয়, কুমির মানুষের জন্যও বেশ উপকারি। কুমিরের চামড়া খুব টেকসই এবং অনেক কাজে লাগান যায়। তাছাড়া, কুমিরের মাংশ বেশ কিছু দেশে জনপ্রিয় খাবার। এই কারণে কুমিরের চাষ বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। ময়মনসিংহের ভালুকায় বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কুমিরের চাষ শুরু হয়। তবে আমাদের সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশে কুমিরের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। লক্ষ বছর ধরে যারা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে আছে, তাদের প্রতি আমাদেরও সচেতন থাকা উচিৎ।
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক
০২/০৯/২০১৩