গুইসাপ- একটি উপকারী প্রাণী

গুইসাপ সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণী৷ বাংলাদেশের সর্বত্রই এদের দেখা যায়। বিশেষ করে বনজঙ্গল, ঝোপঝাড, বাস্তুবন ও কৃষি জমিতে দেখা যায়৷ কোনো একসময় এদের প্রায়শই দেখা যেত৷ এখন তেমন একটা দেখা যায়না৷ বর্তমানে গুইসাপের তিনটি প্রজাতি কোনোরকমে টিকে আছে৷ এগুলো হল কালো গুইসাপ, সোনা গুইসাপ ও রামগদি গুইসাপ৷g1
কালো গুইসাপ লোকালয়ে বসতবাড়রি আশেপাশে বেশি থাকে৷ সোনা গুইসাপ চোখে পড়ে হাওড় ও বিলের আশেপাশে৷ গুইসাপ মূলত গর্তবাসী প্রাণী৷ মাটির গর্ত, উইঢিবি, গাছের কোটর ও ফাটলে এরা বাস করে৷ পানিতেও দেখা যায়৷ এরা সাঁতার কাটতে ও গাছে উঠতে পারে৷ বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় এদের প্রিয় খাদ্য। অন্যান্য খাদ্যের মধ্যে রয়েছে- ছোটসাপ, ব্যাঙ, ইদুর, মাছ, কেঁচো, শামুক, কাঁকড়া ইত্যাদি৷ সুযোগ পেলে হাঁস-মুরগির ছানা ও ডিমে হানা দেয়৷গুইসাপ খুবই নিরীহ প্রাণী৷ মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়৷ তারা অতি উপকারী প্রাণী৷ বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে আমাদের উপকার করে৷ ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করে৷ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুইসাপের ভূমিকা অতূলনীয়৷ এরা খাদ্যশৃঙ্খলে বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ এদের সংখ্যা হ্রাস পেলে প্রধান খাদ্য পোকামাকড়রে সংখ্যা বেড়ে যাবে, ইদুরের উৎপাত বেড়ে যাবে, অনুকূল পরিবেশ হবে বিষাক্ত সাপের৷ যা পরিবেশ ও মানুষের জন্য মোটেও সুখকর নয়৷gui sap ফসলের জমিতে পোকামাকড় দমনের জন্য ব্যবহার করা হয় উচ্চমাত্রার কীটনাশক, ফলে অনেক উপকারী অনুজীব ধ্বংশ হয়ে যায়ও মাটির গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়৷ ফসলে সৃষ্টি হয় নিম্নমাত্রার বিষক্রিয়া যা মানুষকে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে৷ অন্যদিকে গুইসাপ ও ব্যাঙ এসব কীটনাশকের চেয়ে অনে বেশি কাজ করে কোনোরূপ ক্ষতি ছাড়া৷এরা মৃত জীবজন্তু খেয়ে পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে৷তাদের অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক৷ এদের চামড়া অতি মূল্যবান৷ এই উপকারী প্রাণীটি আজ বিলুপ্তির পথে৷ এদের অনেক প্রজাতি হারিয়ে গেছে৷ বর্তমানে যে তিনটি টিকে আছে হয়তো কিছুদিন পর আর থাকবেনা৷ এদের বিলুপ্তির কারণ- চোরাচালান, অতিমাত্রার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার, বনজঙ্গল ধ্বংশ ও হাওড়া বিলের পরিবেশ বিনষ্টকরা৷ এদের অধিকাংশ মারা যায় মানুষের আক্রমনে৷ খাবারের সন্ধানে যখন হানা দেয় হাঁস মুরগির ডিম ও ছানার দিকে, তখন লাঠি দিয়ে পিঠিয়ে মেরে ফেলা হয়৷ অনেক সময় লোহার তৈরী বিশেষ ফাদে শুটকি মাছ বা মৃত ছানা টোপ দিয়ে মারা হয়৷ কোন কোন উপজাতি জনগোষ্টী খাদ্যের জন্য শিকার করে৷ এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে উপকারী প্রাণীটি৷
গুইসাপ সংরক্ষণ করা অতি জরুরি৷ এদের শিকার ও পাঁচাররোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ জনসচেতনতা সৃষ্টি করে অবাধ শিকার বন্ধ করতে হবে৷ প্রয়োজনে টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় উপকারী প্রাণীদের রক্ষায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে৷ প্রাণী সংরক্ষণবিরোধী বিজ্ঞাপন অনুমোদন দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ সরকার, জনগন ও প্রাণী অধিকার সংরক্ষণে জড়তিদের যৌথ উদ্যোগেই সম্ভব প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা, সতেজ থাকা প্রকৃতি ও সুন্দরের মাঝে৷

হারুন- অর- রশিদ
সদস্য- প্রাধিকার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics