খাদ্য বর্জ্যে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে ৩.৩ বিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাস!!! -ফাও (FAO)

বিশ্ব জুড়ে প্রতিবছর প্রায় ১.৩ বিলিয়ন টন খাদ্য “বর্জ্যে” পরিনত হচ্ছে, যা বিশ্বজুড়ে উৎপাদিত মোট খাদ্যের এক তৃতীয়াংশ। এই ক্ষতির পরিমাণ শুধুমাত্র আর্থিকই নয়, বরং এর ফলে চাপ পড়ছে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর, ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ, পানি, ভূমি এবং জীব বৈচিত্র্যের। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ফাও(FAO) গেলো সপ্তাহে এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে আরো বলা হচ্ছে, উৎপাদিত খাদ্য বিনষ্টের ফলে বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৮৭০ মিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন অভুক্ত থেকেই রাতে ঘুমোতে যাচ্ছে।

 “খাদ্য অপচয় পদাঙ্ক: প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রভাব” শিরোনামের এই রিপোর্টে খাদ্য অপচয়ের ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর কীরূপ প্রভাব পড়ে তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে যেখানে, জলবায়ু, পানি, ভূমি, জীববৈচিত্র্য ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। Food-Waste1

এতে বলা হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর উৎপাদিত খাদ্যের যে অংশ “না- খাওয়া” রয়ে যায় এবং তা তৈরিতে যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন তাঁর পরিমাণ, জেনেভা লেকে যে পরিমাণ পানি আছে তাঁর তিনগুণের চেয়েও বেশী!!  এরই সাথে ওই পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনের ফলে ৩.৩ বিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয় বায়ুমণ্ডলে, যার পরিমাণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা জাহাজশিল্পের নির্গমনের চেয়েও বেশী। এছাড়াও, পৃথিবীর মোট ভূমির প্রায় ২৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১.৪ বিলিয়ন হেক্টর জমি খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পরিবেশগত প্রভাবের পাশাপাশি খাদ্য অপচয়ের ফলে মৎস্য এবং সামুদ্রিক খাবার বাদেই বার্ষিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রিপোর্টে খাদ্য অপচয়ের দুইটি শ্রেণী উল্লেখ করা হয়েছে, উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ । উৎপাদন অংশে খাদ্য অপচয়ের হার শতকরা ৫৪ ভাগ যেখানে, ফসল উৎপাদন, উৎপাদন পরবর্তী পরিচালনা, ফসল সংরক্ষণের মতো বিষয় গুলো জড়িত। অপরদিকে, শতকরা ৪৬ ভাগ খাদ্য শস্য অপচয়ের পেছনে চিহ্নিত করা হয় প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিতরণ, এবং ভোগের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে। এতে আরও বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য উৎপাদনকালীন অপচয়ের মাত্রা বেশী অপরদিকে, বিতরণ ও ভোগজনিত অপচয়ের মূলে রয়েছে উন্নত ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো।

রিপোর্টে, খাদ্য অপচয়ের ফলে পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে, যেমনঃ উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, গুদামজাতকরণ, পরিবহণ নিশ্চিতকরণ, খুচরা ও পাইকারি বাজারের মধ্যে সামঞ্জস্য আনয়ন,খাদ্য শৃঙ্খলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ভাল যোগাযোগ, এবং বিবেচনাপ্রসূত খাদ্য ক্রয় এবং বিক্রয়করণ। এছাড়াও, অ-ব্যবহৃত খাদ্য এবং খাদ্য বর্জ্যকে দ্রুত প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বায়ো-গ্যাস এবং পরিবেশ বান্ধব সার উৎপাদনের মাধ্যমে আবার ভূমিতে ফিরিয়ে দেয়া।

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক

সূত্রঃ ওয়ার্ল্ডওয়াচ ইন্সটিটিউট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics