খাঁচায় বন্দী পাখি ; কলুষিত মন অন্ধ
খাঁচায় বন্দী পাখি, শিকল বন্দী মানবহৃদয় মানুষ যখন কোন কারণে অত্যধিক খুশি হয় তখন নিজেকে মুক্তপাখি মনে করে৷ উড়ে যেতে চায় আকাশের নীল সীমানায়৷ বাস্তবে সম্ভব না হলেও কল্পনায় ঠিকই পাখা মেলে মুক্ত হাওয়ায়৷ অথচ সেই মানুষই পাখিকে খাচায় বন্দী করে রাখে৷ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সুন্দর মন দরকার, কলুষিত মন অন্ধ৷ প্রকৃতির রূপ তার স্বকীয়তায়, কৃত্রিমতায় নয়৷ জানালার পাশে ফুল গাছ সবাই পছন্দ করে৷ ফুলের সুবাস ভালো লাগে সবার৷ মিষ্টি গন্ধের সাথে ডালে বসা কোকিল কিংবা দোয়েল এর মিষ্টি সুর মন ভালো করে দেয়৷ আপনার বাসার বারান্দায় কিংবা ছাদে ঝুলানো লোহার খাচাটিতে যে ময়না রয়েছে তার মানুষের ন্যায় কথা বলা আপনার মনে আনন্দ দেয়৷ কিন্তু তার কথা বলা আপনার বিষন্ন মনকে কখনো ভালো করতে পারবেনা৷ বরং তখন আপনার বিরক্তির সৃষ্টি হবে৷ অন্যদিকে, আপনি পাখির কোলাহলপূর্ণ কোন প্রাকৃতিক পরিবেশে বসলে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে৷ অনেক রসনাভোগীর জিহ্বার চাহিদা মেটাতে কিংবা শিকারীর মনের খায়েস পুরনে অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে গিয়েছে, অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে৷ পাখি শিকার ও বেচাকেনা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও থেমে নেই হিংস্র জিহ্বা আর মনের কার্যকলাপ৷ বিভিন্ন যায়গায় প্রকাশ্য কেনাবেচা হচ্ছে এসব পাখি৷ খাচায় বিক্রি করা পাখির মধ্যে শালিক, ময়না, টিয়া অন্যতম৷ এছাড়াও হাওড় ও বিল থেকে শিকার করা বক, ডাহুকসহ অনেক অথিতি পাখি বিক্রি হয়৷ পাখির মাংস খেতে তো কোনো নিষেধ নেই৷ যেগুলো খাওয়ার জন্য বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয় যেমন, হাঁস, মোরগ, কোয়েল এগুলো খান৷ আপনার রসনাভোজের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনা টা কি শুভনীয়? যখন এগুলো হারিয়ে যাবে তখন কোথায় থাকবে আপনার রসনাভোজ? পাখির গুরুত্ব শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নয়, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখির ভুমিকা অপরিসীম৷ পাখি ছাড়া জীববৈচিত্র্য তথা প্রকতির ভারসাম্য চিন্তা করা পানিবিহীন সুষম খাদ্যের মত৷ বেশিরভাগ পাখির প্রধান খাদ্য পোকামাকড় তথা ফসলের বালাই৷ বিশেষ করে শালিক, ফিঙে, কাক বালাই দমনে সাহায্য করে৷ পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতেও তাদের অবদান অনেক৷ শকুন, বাঁজপাখি, চিল, কাক সহ অনেক পাখি মরা জীবজন্তু খেয়ে থাকে৷ যা পরিবেশকে রক্ষা করে দুষনের হাত থেকে৷ ছোট্ট হার্মিং বার্ড থেকে শুরু করে বিশালাকার বাঁজ, শকুন প্রতিনিয়ত আমাদের যে উপকার করে যাচ্ছে তার কয়টার খবর রাখি আমরা? অথচ আমরা প্রতিনিয়ত নিধন করে চলছি প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে৷ তাহলে কি আমাদের হৃদয় সত্যিই শিকলবন্দী? তা নাহলে ক্ষুদ্র স্বার্থে আমরা কিভাবে উপকারী বন্দুর মাংস চর্বন করি তৃপ্তি নিয়ে, খাচায় বন্দী করে বিলাসিতা করি! আমাদের মানসিকতা কত নিচুপর্যায়ে গেলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতিকে খাচায় পাখি পালনে উৎসাহী করতে পারে৷ ( একটি মোবাইল কোম্পানির বিজ্ঞাপন৷ পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের পর আর দেখা যায়নি৷) একজনের একার পক্ষে পাখি সংরক্ষন সম্ভব নয়৷ আবার সবাই একই সাথে কাজ শুরু করবে তাও নয়৷ আপনি আগে শুরু করেন, পাশের জনও শুরু করবে৷ প্রয়োজনে তাদের বোঝান৷ এভাবেই সবাই সচেতন হবে৷ মনে রাখবেন, যার বিবেক যত সঠিক সে তত তারাতারি শুরু করবে৷ আসুন পাখি শিকার বন্ধ করি৷ প্রকৃতিকে তার ছন্দে চলতে দেয়৷ তাতে আপনার আমারই মঙ্গল৷ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পাখির কোলাহলপূর্ণ একটি সবুজ পৃথিবী রেখে যাওয়া আপনার আমার সবার দায়িত্ব৷
★ হারুন- অর- রশিদ, সদস্য- প্রাধিকার৷