কালো হাঁস
কালো হাঁস (Aythya fuligula) (ইংরেজি: Tufted Duck) বা ঝুঁটি হাঁস Anatidae (অ্যানাটিডি) গোত্রের অন্তর্গত Aythya গণের মাঝারি আকৃতির এক প্রজাতির ডুবুরি হাঁস। । স্বভাবে এরা প্রধানত পরিযায়ী। এদের শীতকালে বাংলাদেশের ঢাকা সিলেট চট্টগ্রাম খুলনা বরিসাল রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় ।গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশংকাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছায় নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. কালো হাঁসকে Least Concern বা আশংকাহীন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে । বাংলাদেশে এদের Least Concern বা আশংকাহীন প্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হয় ।
পূর্ণবয়স্ক পুরুষ কালো হাঁস একমাত্র মাঝারি হাঁস যাকে দেখতে সাদাকালো মনে হয়। পুরুষ হাঁসের সারা দেহ কালো, কেবল পেটের দিক ও ডানার নিচের দিক বাদ দিয়ে যা ধবধবে সাদা বর্ণের হয় । এছাড়া কপোলের ক্ষুদে ক্ষুদে পালকগুলো কাল, তবে রোদ বা আলো পড়লে চিক চিক করে। পুরুষ হাঁসের ঘাড়ের উপর নুইয়ে পড়া ঝুঁটি থাকে। স্ত্রী হাঁসের আকৃতি পুরুষ হাঁসের মতই, তবে পালক বাদামী বা তামাটে মেশানো বাদামী। উভয় হাঁসেরই চঞ্চু নীলচে-ধূসর, চঞ্চুর সম্মুখভাগে ত্রিকোণাকৃতির কালো দাগ থাকে। স্ত্রী হাঁসের চঞ্চুর নিচের কিছু পালক সাদা। এরা দৈর্ঘ্যে কমবেশি ৪৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে ১.১ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়।
তৃণসম্বৃদ্ধ নিম্নভূমি ও জলাশয় কালো হাঁসের প্রিয় আবাস। বিশেষত যেসব জলাশয়ের গভীরতা ৩-৫ মিটার সেসব জলাশয়ে এরা বসবাস করে, ১৫ মিটারের বেশি গভীর জলাশয় এড়িয়ে চলে। মিঠাপানির হ্রদ, বড় বিল ও দিঘী, কম স্রোতসম্পন্ন প্রশস্ত নদী, জনহীন চর, উপযুক্ত আবাসযুক্ত উপকূলীয় এলাকা, সামুদ্রিক দ্বীপ এবং মোহনাগুলোতে এদের প্রায়ই দেখা যায়। স্বাভাবিক বাসস্থানের পানি যদি জমে বরফ হয়ে যায় বা এরকম বড়সড় বিপদের সম্মুখীন হলেই কেবল কালো হাঁস শক্তিশালী স্রোতযুক্ত জলাশয় বা গভীর সমুদ্রে নামে ।
কালো হাঁস পানিতে ডুব দিয়ে শামুক, ঝিনুক, গুগলি ও অন্যান্য মলাস্ক খায়, এগুলো এদের প্রধান খাদ্য। এছাড়া এরা জলজ উদ্ভিদের বীজ ও মূলও খায়। পানিতে ভাসমান পোকামাকড়, উদ্ভিদ ও জলজ আগাছা এদের খাদ্য। কালো হাঁস পানির গভীরের জলজ পোকামাকড়, উভচর ও ছোট মাছ খায়।
কালো হাঁসেরা তৃণ দিয়ে বাসা বানায়। পানিতে ভাসমান অবস্থায়, উঁচু ঘাসসমৃদ্ধ ভূমিতে অথবা দ্বীপে এরা বাসা করে। অনেকসময় গঙ্গাকবুতর ও গাংচিলের সাথে উন্মুক্ত ভূমিতেও বাসা বানায়, বিশেষ করে শিকারীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। বাসা ডাঙায় হলে তা সাধারণত পানির খুব কাছে হয়।
কেবল মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে কালো হাঁস সাধারণত স্থায়ী, পরিযায়ী নয়। অন্যান্য অঞ্চলের হাঁস অধিকাংশই পরিযায়ী স্বভাবের। পরিযায়ী হাঁসেরা এপ্রিলের শেষে প্রজনন অঞ্চলে ফিরে আসে। এসময় এরা পৃথক জোড়ায় অথবা ছাড়াছাড়া ভাবে একই দলে ঘুরে বেড়ায়। এসময় এরা বাসা বানায় ও ডিম পাড়ে। স্ত্রী হাঁস বাসায় ৬ থেকে ১৪টি সবজে-ধূসর ডিম পাড়ে। শুধুমাত্র স্ত্রী হাঁস ডিমে তা দেয়। ডিম পাড়ার ২৩-২৫ দিন পর ডিম ফুটে ছানা বের হয়।
অনেকসময় একই জলাশয়ে শ’খানেক বাসা দেখা যায়, যদিও বাসাগুলো কলোনি করে থাকে না। ডিম ফুটে গেলে পুরুষ হাঁসেরা দল বেঁধে উষ্ণতর অঞ্চলে চলে যায়। এটা জুনের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের শুরু পর্যন্ত ঘটে। স্ত্রী হাঁসের পরিযায়ন প্রায় এক মাস পরে ঘটে। শীতের সময়ে অত্যধীক দলবদ্ধভাবে থাকে, একেকটি দলে হাজারের মত সদস্য একসাথে ঘুরে বেড়ায়।