কালাকপাল বনমালী
সৌরভ মাহমুদ
সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্যে উদ্ভিদ গবেষণার ফাঁকে ফাঁকে যেটুকু সময় পেতাম, পাখি দেখার জন্য ব্যয় করতাম। সুন্দরবনের ভেতর পাখি দেখা সহজ নয়। শ্বাসমূল চারদিকে বিছিয়ে থাকে। তাই হেঁটে বেড়ানোও কষ্টকর। ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে অনেক প্রজাতির পাখি রয়েছে। সেসবের মধ্যে কালাকপাল বনমালী অনিন্দ্য এক পাখি। সাধারণত উড়ে এসে বসে গাছের প্রধান কাণ্ডে। খুব দ্রুত সময়ে লাফিয়ে লাফিয়ে গাছের কাণ্ডের পোকা খেয়ে উড়ে গিয়ে বসে অন্য এক গাছের কাণ্ডে। বনমালীর খাবার আহরণের এ দৃশ্য মাত্র দুবারই দেখেছি। ছবি তোলার জন্য বনমালী আমাকে সময় দিয়েছে মাত্র একবার সুন্দরবনের কটকায়।
বনের ভেতর থেকে উড়ে এসে কাণ্ডের বাকল ও গাছের পুরোনো বড়, শেওলাঢাকা ডালের বুকে হেঁটে এরা ঠুকরে খাবার খায়। খাদ্যতালিকায় আছে পোকা ও তাদের লার্ভা। গাছের গা আঁকড়ে থাকতে ও ওপরে-নিচে চলাচলে এরা অত্যন্ত পটু। সাধারণত খাবারের সময় চিট চিট বা সিট সিট শব্দ করে ডেকে বেড়ায়। ডাক শুনেই ছোট্ট এ পাখির আগমন বুঝে নেন দক্ষ পাখি পর্যবেক্ষকেরা।
কালাকপাল বনমালী (Valvet-fronted Nuthatch) লাল ঠোঁটের ছোট নীলচে পাখি। পাখির দৈর্ঘ্য মাত্র ১০ সেন্টিমিটার, ওজন ২৪ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ বেগুনি-নীল, ওড়ার পালক কালচে, আগাসমেত কালচে নীল। গলার মাঝখানটা সাদা। কপাল মখমল কালো, যার সঙ্গে চোখের সামনে-পেছনের কালো মোটা দাগ মিলেছে। মেয়েপাখির এ কালো দাগ নেই। এরা শরীরটাকে হালকা বাঁকিয়ে ডালে ডালে বেড়ায়। এ পাখি বেশ চঞ্চল। পাখির চোখ ও চোখের বলয় হলুদ। লালচে ঠোঁটের ওপরের অংশের প্রান্তদেশ বাদামি, পা ও পায়ের পাতা পাটকিলে বাদামি।
বনমালী বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। প্রধানত প্যারাবনে বিচরণ করে। পাতাঝরা ও চিরসবুজ বনেও দেখা যায়। বাংলাদেশের সুন্দরবনেই এ পাখি বেশি দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে গাছের ফোকরে ছোট বাসা বানায়। দুই থেকে ছয়টি লালচে ছোপযুক্ত সাদা ডিম পাড়ে। ছেলে ও মেয়েপাখি মিলে ঘরসংসার করে।
শুত্রঃ দইনিক প্রথম আলো (০৯/০৬/২০১৩)
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-06-09/news/359110