কমে যাচ্ছে হাতি
বাংলাদেশের স্থায়ী বন্যহাতির আবাসস্থল হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইনা, বাঁশখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া; কক্সবাজারের কাসিয়াখালি, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ; বান্দরবানের লামা ও আলিকদম; রাঙ্গামাটির কাউখালি, কাপ্তাই ও লংদু এবং খাগড়াছড়িসহ দেশের ১১টি বনবিভাগে এদের বিচরণ করতে দেখা যায়। ড. রেজা খানের জরিপ অনুযায়ী, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ছিল ৩৮০টি। ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ২৩৯টি। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর করা জরিপে পাওয়া যায় ২২৭টি। উল্লিখিত পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়, বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। পৃথিবীতে ২ প্রজাতির হাতি রয়েছে : ১. এশিয়ান প্রজাতি ও ২. আফ্রিকান প্রজাতি। বাংলাদেশের হাতি এশিয়ান প্রজাতির। আফ্রিকান প্রজাতির হাতি পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েরই দাঁত গজায়। কিন্তু এশিয়ান প্রজাতির ক্ষেত্রে শুধু পুরুষ হাতির দাঁত গজায়। একটি হাতি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ কেজি খাবার খায়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হাতির ওজন ৫ টন। আর স্ত্রী হাতির ওজন ৪ টনের কিছু বেশি হতে পারে। স্ত্রী হাতি সাধারণত একবারে একটি বাচ্চা দেয়। এদের গর্ভধারণকাল ২২ মাস। ২ বার ৪ বছর পর পর স্ত্রী হাতি বাচ্চা দেয়। জন্মের সময় বাচ্চার ওজন ৯০ কেজি। হাতির খাদ্য হচ্ছে বাঁশ, কলাগাছ, ফলদ উদ্ভিদ ও তৃণলতা। দিনে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে হাতি। এদের স্বাভাবিক গতি ঘণ্টায় ২৫ মাইল। আইসিইউএনের দেয়া তথ্যানুযায়ী বনবিভাগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলে হাতি আছে ৩০ থেকে ৩৫টি, কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগ মিলিয়ে আছে ৮২ থেকে ৯৩টি। বান্দরবানে আছে ১২ থেকে ১৫টি এবং লামা বিভাগে আছে ৩৫ থেকে ৪০টি হাতি। এছাড়া কক্সবাজার উত্তর বিভাগে আরো ৭ থেকে ৯টি এবং দক্ষিণ বিভাগে ৩০ থেকে ৩৫টি হাতি রয়েছে। আর অভিবাসী হাতির সংখ্যা ৮৪ থেকে ১০০টি। বাংলাদেশে হাতি কমে যাওয়ার ৯টি কারণ আইইউসিএনের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া, খাদ্য সংকট, চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া, যত্রতত্র জনবসতি গড়ে ওঠা এবং চোরাশিকারিদের নিষ্ঠুরতাসহ আরো কয়েকটি কারণ। তবে ভয়ঙ্কর হচ্ছে চোরাশিকারিদের উপদ্রব। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শুধু বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার ৬টি উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দাঁত ও হাড়গোরের জন্য ৩২টি হাতি হত্যা করা হয়। সুতরাং হাতি রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।
সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ ১৪/০৭/২০১৩