
কমে যাচ্ছে রাজ হরিয়াল
ভারি শান্ত স্বভাবের পাখি। অন্য প্রজাতির পাখি তো দূরের কথা, নিজ প্রজাতির কারো সঙ্গেও কখনো ঝগড়া-ফ্যাসাদ বাধাতে দেখা যায় না। এরা দলবদ্ধভাবে খুব কমই বিচরণ করে। জোড়ায় জোড়ায় কিংবা একা একাও ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় এদের। বট বা পাকুড় গাছে এদের আনাগোনা বেশি। কারণ বট-পাকুড়ের ফল এদের খুব প্রিয়।
সূর্যস্নান করতে ভালোবাসে এরা। প্রায়ই দেখা যায় সূর্যোদয়ের পর কিংবা সূর্যাস্তের সময় গাছের পত্র-পল্লববিহীন ডালে বসে রোদ পোহাতে। এ পাখি মিশ্র চিরসবুজ অরণ্যের বাসিন্দা। ১৯৮০-র দশকেও সিলেট-রাঙামাটি এলাকার বনে বনে এদের প্রচুর দেখা মিলত। বর্তমানে এদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। বন উজাড় এর অন্যতম কারণ। এরা পুরোপুরি বৃক্ষচারী। গাছে গাছেই সর্বক্ষণ বিচরণ করে। শুধু তেষ্টা পেলে মাটিতে নামে। এ পাখিরা ডাকে ভারী কণ্ঠে ‘উ-হু-হু বা ঘু-য়ূক ঘুয়ূক’ সুরে। নির্জন বনে এদের ডাক হঠাত্ কানে এলে যে কেউ ভড়কে যেতে পারে। দুর্বল মনের লোকজন একে ভূতুড়ে আওয়াজ ভেবে বসে।
পাখিটার বাংলা নাম ধুমকল বা রাজ হরিয়াল, ইংরেজিতে বলে ‘গ্রিন ইম্পিরিয়াল পিজিয়ন’ বৈজ্ঞানিক নাম Ducula aenea, গোত্র কলাম্বিদি।
এ পাখি লম্বায় ৪৩-৪৭ সেন্টিমিটার। মাথা, গলা, বুক, পেট পরিচ্ছন্ন ধূসর। পিঠ ধাতব-সবুজ। লেজের তলা বাদামি লাল। চোখের মণি গাঢ় লাল। পা সিঁদুরে লাল। ঠোঁটের ডগাটা সাদাটে। মধ্যখানে নীলচে সাদা। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
এদের প্রধান খাদ্য বট-পাকুড়ের ফল। এছাড়া ডুমুর, জায়ফল ইত্যাদি খায়। তবে এরা সাধারণত ফলের খোসাসুদ্ধ গিলে খায়। হজমের পর খোসা উগরে ফেলে দেয়। এদের একটা বড় সুবিধা হল এরা খাদ্যনালী ইচ্ছেমতো বাড়াতে পারে। ফলে খোসাসুদ্ধ গিললেও সমস্যা হয় না।
প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। স্থানভেদে প্রজনন সময়ের হেরফের হয়। এরা বাসা বাঁধে মাটি থেকে অন্তত দশ মিটার উঁচুতে। বিশেষ করে গাছের ঘন পাতার আড়ালে বাসা বাঁধে। সহজে কারো নজরে পড়ে না। ডিম পাড়ে ১-২টি। বেশিরভাগ সময় ডিম পাড়ে ১টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন (মতান্তরে)।
http://ittefaq.com.bd