'ইয়েতি' কি তবে সত্যি ??!!
মাহবুব রেজওয়ান
অদ্ভুত সুন্দর পৃথিবী কতই না বিচিত্র রহস্যের সমাহার। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষ পৃথিবীর রহস্যের পিছনে ছুটে বেড়িয়েছে। আজও অনেক রহস্যের মীমাংসা হয়নি। প্রাণীজগতের হাজারো সমাহারের ভিড়ে অনেক কিছুই হয়তো মানুষের জ্ঞানের পরিসীমার বাইরে থেকে গেছে। কেউবা হয়তো ক্ষণিকের জন্য উঁকি দিয়ে চলে গেছে আড়ালে।
এমনই এক রহস্যের ধুম্রজাল মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিল হিমালয়ের ইয়েতি বা তুষারমানব। অনেকেই এই রহস্যময় প্রাণীটিকে বিভিন্ন সময়ে দেখেছে বলে দাবি করে থাকে। আবার অনেকে তার অস্তিত্বই স্বীকার করে না। তবে মানুষ রহস্য পিয়াসী। আজ হোক, কাল হোক। রহস্যের সমাধান তাকে করতেই হবে।
১৯২৫ সালে আলোকচিত্রী ও রয়্যাল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটির সদস্য এন এ তোশবাজি একটি ছবি প্রকাশ করেন। ওই ছবিতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, ‘মানুষের আকৃতির একজন ঋজু হয়ে হাঁটছে’।
তিনি বলেন, “তুষারের বিপরীতে তাকে কালো দেখাচ্ছিল এবং যতোটুকু আমি দেখতে পেয়েছি, তার শরীরে কোনো কাপড় ছিল না।”
১৯৫১ সালে ব্রিটিশ পর্বতারোহী এরিক শিপটন মাউন্ট এভারেস্টের ৫,৫০০ মিটার উঁচুতে ইয়েতি পায়ের ছাপের ছবি প্রকাশ করার পর ইয়েতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেড়ে যায় বিশ্ববাসীর। তিনি যে পায়ের ছাপটি আবিষ্কার করেন, তা প্রস্থে প্রায় ১৩ ইঞ্চি ছিল।
অবশেষে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তারা এই রহস্যঘেরা তুষারমানবের অস্তিত্ব উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন।জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘ইয়েতি’ র অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন বিজ্ঞানীদের একটি দল। তারা পরীক্ষার মাধ্যমে বের করেছেন, প্রাচীন মেরু ভালুক বা পোলার বিয়ার (আকর্টিক সাগরে ঘেরা আকর্টিক সার্কেলে বাসকরা মাংসাশী ভালুক) ও বাদামি ভালুকের যৌথ মিলবন্ধন রয়েছে এ প্রাণীর মধ্যে। ইয়েতির সংগৃহীত চুলের নমুনা থেকে দেখা গেছে, বংশগতভাবে (জেনেটিক্যালি) ১ লাখ ২০ বছর আগের প্রাচীন পোলার ভালুক সঙ্গে এদের সাদৃশ্য রয়েছে।
বছরের পর বছর গবেষণা চালিয়ে ও ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এই তথ্য প্রমাণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান জেনেটিক্সের অধ্যাপক ব্রিয়ান সিকেস এ গবেষণা চালিয়েছেন।
অধ্যাপক ব্রিয়ান সিকেসের মতে ফলাফলটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। তিনি আরও বলেন, প্রাচীন পোলার ভালুকের উপস্থিতির বিষয়টি জানা গেলেও তারা এখনও হিমালয়ে ঘুরছে কিনা তা বোঝা যায় না। অধ্যাপক সিকেস জানান, উপ-প্রজাতির বাদামি ভালুক হিমালয়ের ওপরে থাকতে পারে। পূর্বপুরুষ মেরু ভালুক থেকে বাদামি ভালুকের উৎপত্তি হতে পারে। এমনকি বাদামি ভালুক ও প্রাচীন মেরু ভালুকের বংশধরদের মেলামেশায় সংকরজাতের হতে পারে এ উপ-প্রজাতির ভালুক। অধ্যাপক সিকেস হিমালয়ের উচু অঞ্চলের গ্রামের স্থানীয়দের কাছে ইয়েতি নামে পরিচিত দুটি প্রাচীন প্রাণীর চুলের নমুনা পরীক্ষা করেছেন। এদের একটি ভারতের লাদাখ ও অন্যটি ভুটানে পাওয়া গেছে। প্রাণী দু’টির নমুনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল জেনব্যাংক ডাটাবেজে সংরক্ষিত অন্যান্য প্রাণীর জেনোমের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি দেখতে পেয়েছেন, তার সংগৃহীত নমুনা নরওয়ের সালবার্ডে প্রাপ্ত প্রাচীন মেরু ভালুকের চোয়ালের হাড় থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে।
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক
সূত্রঃ ইন্টারনেট